অথবা, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব কাকে বলে?
অথবা, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব কী?
অথবা, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যা সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিই দর্শন। মৌলিক সমস্যা বলতে বুঝায়, যে সমস্যায় দেশ, কাল ও পাত্রভেদে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। এসব সমস্যা নিয়ে পাশ্চাত্য দার্শনিকরা যেমন ভাবিত হয়েছেন, তেমনি ভাবিত হয়েছেন মুসলিম দার্শনিকরা। ঐতিহ্যগতভাবে তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে সমস্যাসমূহের সুচিন্তিত মত দিয়েছেন।
মুসলিম ধর্মতত্ত্ব : ধর্মতত্ত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘The logy’. ধর্মতত্ত্ব হলো এমন বিদ্যা, যেখানে ধর্মের স্বরূপ, ধর্মীয় বিধিবিধান ও আচার অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কার্যাবলি ধর্মীয় অনুভূতি, চেতনার ভূমিকা, উপযোগিতা ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। অতিপ্রাকৃতিক সত্তা, ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধার্মিকতা, ধর্মীয় প্রভাব ইত্যাদি ধর্মীয় বিষয়ের আলোচনা নিয়ে ধর্মতত্ত্ব গড়ে উঠে। ধর্মের দুটি রূপ দেখা যায়। যথা :
ক. প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ব ও
খ. প্রত্যাদিষ্ট ধর্মতত্ত্ব।
ক. প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ব : প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ব বলতে বুঝায় এমন এক ধর্মতত্ত্বকে, যেখানে প্রত্যাদেশ ছাড়াই বুদ্ধি, যুক্তি, রীতিনীতি, জীবনযাপন প্রভৃতির মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাস বা মতের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়।
খ. প্রত্যাদিষ্ট ধর্মতত্ত্ব : প্রত্যাদিষ্ট ধর্মতত্ত্ব বলতে এমন ধর্মতত্ত্বকে বুঝায়, যেখানে ধর্মীয় মতের পক্ষে যুক্তির পরিবর্তে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেয়া যায়। এক্ষেত্রে ধর্মতত্ত্ব পরম সত্তা বা চরম সত্য এমন বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ পরম সত্যকে উৎসগতভাবে জানা ও উপলব্ধি করা বুদ্ধির ব্যাপার নয়, বিশ্বাসের ব্যাপার। ‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর’ কথাটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ‘পরমসত্তা আছেন এবং তিনিই একমাত্র সত্য।’ এ বহুব্যষ্টি যুক্তির মাধ্যমে কিছু বোধগম্য হলেও ঐশী সত্তার প্রকৃত স্বরূপ জানার পন্থা নিছক যুক্তি নয়, বরং প্রত্যাদেশ। এ ধরনের ধর্মতত্ত্ব সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। প্রত্যাদেশ নির্ভর ধর্মতত্ত্বে পরমসত্তা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা প্রত্যাদেশ নির্ভর বলে কেবল বিশ্বাসের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে হয়, তবে তা নিছক যুক্তির মাধ্যমে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দার্শনিকদের জন্য অপরিহার্য। সুতরাং মুসলিম ধর্মতত্ত্ব বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল।