অথবা, মুসলিম দর্শন কাকে বলে?
অথবা, মুসলিম দর্শনের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, মুসলিম দর্শন সম্পর্কে লিখ।
অথবা, মুসলিম দর্শন সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, মুসলিম দর্শন কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যা সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিই দর্শন। মৌলিক সমস্যা বলতে বুঝায়, যে সমস্যায় দেশ, কাল, পাত্রভেদে কোন প্রভেদ লক্ষ্য করা যায় না। আমরা দেখি যে, এসব সমস্যা নিয়ে পাশ্চাত্যের দার্শনিকরা যেমন ভাবিত হয়েছেন তেমনি ভাবিত হয়েছেন মুসলিম দার্শনিকরা। ঐতিহ্যগতভাবে তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের সমস্যাসমূহ সম্পর্কে সুচিন্তিত মত দিয়েছেন। আর এভাবেই মুসলিম চিন্তাবিদগণের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে মুসলিম দর্শন।
মুসলিম দর্শন : ইতিহাসের অন্যান্য জাতির মতো ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাও যুগ যুগ ধরে এক বিশেষ পদ্ধতিতে তাদের নিজস্ব জীবনদর্শন প্রণয়নের চেষ্টায় নিয়োজিত ছিল। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত থাকার ফলে সত্যের স্বরূপ নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে যে কোন মতপার্থক্যই দেখা দিক না কেন, একথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, তাদের মূল
বিশ্বাস ও নীতি প্রতিষ্ঠিত ছিল কুরআন ও হাদিসের দৃঢ় ভিত্তির উপর। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলমানদের চিন্তা ও কর্মের পরম অবলম্বন হিসেবে সবসময় কার্যকর ছিল আল কুরআন। তাই ড. আমিনুল ইসলাম মনে করেন, “মুসলিম দর্শন বলতে বুঝায় এমন এক মূল্যবোধ ও জীবনদর্শনকে যার উৎপত্তি কুরআন ও হাদিস থেকে এবং যা ক্রমবিকশিত হয়েছে পরবর্তীকালে আবির্ভূত বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের জগৎ ও জীবন জিজ্ঞাসার ফলশ্রুতিতে।” (মুসলিম দর্শনের স্বরূপ ও পরিসর; পৃ-৮) তবে পরবর্তীতে পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে এবং জীবনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে মুসলমানরা তাদের ধর্মকে বুঝার যে বিচারশীল আন্তরিক প্রয়াস চালিয়েছিলেন তার ভিত্তিতে ক্রমশ গড়ে উঠেছে মুসলিম দর্শন। জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও সমস্যার ব্যাখ্যায় তাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল ধর্মীয় মতাবলি এবং এ ধর্মীয় মতাবলি পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়েছিল বিরাজমান অভ্যন্তরীণ ও বহিরাঙ্গিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ইসলামের শক্তিশালী প্রভাব কিছু কিছু প্রেরণা রীতিনীতি ও প্রথাপ্রচলনে আমূল পরিবর্তন ঘটায় এবং বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামের বাণী ও শিক্ষাকে কিছু কিছু যুগোপযোগী ধারণা ও বিশ্বাসের সাথে যুক্ত ও সমন্বিত করার প্রয়াস পান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের ধ্যানধারণা ও আলোচনা ছিল ধর্মপ্রভাবিত। এর কারণ ধর্মকে বুঝা ও উপলব্ধি করার মূল লক্ষ্য নিয়েই ছিল এসব মত ও আলোচনা রচিত ও নিবেদিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কুরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহর অস্তিত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব, জীবন, আত্মা, ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে যৌক্তিক ও প্রজ্ঞাভিত্তিক আলোচনাই হলো মুসলিম দর্শন। মুসলিম দর্শন হলো সেই দর্শন যা মুসলিম সংক্রান্ত সর্বজনীন জ্ঞানের অনুশীলন করে এবং বিশ্বের সাথে মুসলমানদের জ্ঞানের অনুশীলন করে এবং বিশ্বের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।