অথবা, মুসলিম দর্শনে পারস্যের প্রভাব কতটুকু? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মুসলিম দর্শন কিভাবে পারস্যের প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত?
অথবা, মুসলিম দর্শনে পারস্যের প্রভাব সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শন বলতে বুঝায় এমন এক মূল্য নির্ধারণ ও জীবনদর্শনকে যার উৎপত্তি কুরআন ও হাদিস থেকে; যার আবির্ভাব হয়েছে বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের জগৎ ও জীবন জিজ্ঞাসার ফলশ্রুতিতে। মুসলিম দর্শন কথাটি একটি ব্যাপক নামের নির্দেশক। সুতরাং মুসলিম দর্শনে পারস্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
মুসলিম দর্শনে পারস্যের প্রভাব : পারস্য জয়ের পর মুসলমানরা পারস্য চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসে। পারস্যের অধিবাসীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল ঠিকই; কিন্তু সব সময় সব বিষয়ে যে তারা এ ধর্মের প্রতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুগত ছিল তা বলা যায় না। আরবদের চরিত্রে তখন যুক্ত হয়েছিল এক নতুন জাতির তরতাজা শক্তি ও নতুন ধর্মান্তরিতদের অগ্নিময় উদ্যম। অপরদিকে পারস্যবাসী ছিল এক প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির গর্বে গর্বিত অলস জাতি। ফলে দেখা যায় যে, সমাজের উচ্চ স্তরের অধিকাংশ পারসীয় ছিলেন মর্যাদা সচেতন এবং নতুন কর্মের অনুশাসন ও আনুষ্ঠানিকতার প্রতি উদাসীন। প্রাচীন প্রথা ও ঐতিহ্যের প্রতি ছিল তাদের এক অব্যাহত আন্তরিক সহানুভূতি। এ কারণেই ইসলামে তারা প্রয়োগ করে তাদের ফেলে আসা ধর্ম ও ঐতিহ্যের প্রাচীন ধারণা। আমরা তাই দেখি যে, ইসলামি চিন্তা- ধারায় তাদের প্রথা ও ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটে। শিয়া সম্প্রদায়ের দর্শনে এবং সুফি দর্শনের পরবর্তী বিকাশে কিছুটা পারসিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ দিক থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভবের জন্য পারসিক প্রভাবকেই দায়ী করা চলে। কিন্তু সুফি মরমিবাদে পারসিক প্রভাব রয়েছে বলা চলে না। কেননা সুফি মত ও পথ কুরআন ও হাদিসে নির্দেশিত। ফলে সুফি দর্শন পারসিক প্রভাব বর্জিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তা হতে শিক্ষা লাভ করে থাকে। পারস্যবাসীরাও প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির গর্বে গর্বিত হয়েছিল। সুতরাং মুসলিম দর্শনে পারস্যের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।