অথবা, মুসলিম দর্শনের বাহ্যিক প্রভাব বলতে কী বুঝ?
অথবা, মুসলিম দর্শন কিভাবে বাহ্যিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত?
অথবা, মুসলিম দর্শনের বাহ্যিক উৎস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মুসলিম দর্শনে বাহ্যিক প্রভাব কতটুকু?
উত্তর৷ ভূমিকা : ইসলামের ক্রমবিকাশের ধারায় বিভিন্ন যুগে উদ্ভূত বিভিন্ন দার্শনিকতত্ত্ব যা কুরআন ও হাদিসের পরিপন্থী নয় তা মুসলিম দর্শনের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামের অব্যাহত অগ্রগতির ধারার পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে কুরআন ও হাদিসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন চিন্তাধারাও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ফলে মুসলিম দর্শনের ব্যাপকতা শুধু কুরআন ও হাদিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি এর বাইরেও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
মুসলিম দর্শনের বাহ্যিক উৎস : প্রতিটি জাতি তাদের দর্শন আলোচনায় শুধু নিজেদের প্রজ্ঞাকে গুরুত্ব দেয় নি, তারা অন্যান্য মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। এ প্রভাব তাদের মৌলিক চিন্তাকে বিকশিত হতে সহায়তা করেছে। মুসলমান দার্শনিকরা কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস হতে অনুপ্রাণিত হলেও গ্রিক দর্শন বিশেষ করে প্লেটো, এরিস্টটলের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :
১. গ্রিক দর্শনের প্রভাব : মধ্যযুগের বিশ্ব যখন যুদ্ধ, হানাহানি, কুসংস্কার ও অমানবিকতার চর্চায় লিপ্ত তখন মুসলমানরা জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত। তাই দেখা যায় যে, নব্য প্লেটোবাদী মতবাদ নিয়ে দার্শনিকরা আলোচনা করেছেন। মুসলিম দার্শনিকরা গ্রিক দার্শনিকরা এরিস্টটলকে প্রথম শিক্ষক বলে অভিহিত করেছেন। ফলে আমরা বলতে পারি যে, গ্রিক
দর্শনের পঠন মুসলিম দার্শনিকদের চিন্তার বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
২. খ্রিস্টীয় প্রভাব : পাশ্চাত্য দর্শনের মধ্যযুগের পুরো সময়টি খ্রিস্টীয় ধর্মের আলোকে দর্শনে আলোচিত হয়েছে, যা ‘স্কলাস্টিক’ দর্শন নামে পরিচিত। মুসলমানরাও তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দর্শন আলোচনা করতে চেয়েছেন। উমাইয়া শাসনামলে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। ফলে তাদের সাথে বিভিন্ন মতের সম্মিলন ঘটে। আর
এ ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, মুসলিম দর্শনে খ্রিস্টীয় ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
৩. পারসিক প্রভাব : মুসলমানদের পারস্য বিজয়ের পর পারস্যবাদী জনগোষ্ঠী ইসলামের সত্য সুন্দর ও মানবতাবাদীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ফলে তাদের মধ্যে ইসলামি ভাবধারার সাথে নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সভ্যতার ছাপ ক্রমান্বয়ে পড়তে থাকে।
৪. ভারতীয় দর্শনের প্রভাব : হাজ্জাজ বিন ইউসুফের শ্রীলংকা আক্রমণের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা ভারতবর্ষে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে তাদের চিন্তা চেতনা ও যুক্তিবাদিতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই ভারতীয়দের আধ্যাত্মিকতার দ্বারা মুসলমান চিন্তাবিদগণ বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম দার্শনিকরা কুরআন, হাদিস ব্যতীত বাহ্যিক উৎস অর্থাৎ গ্রিক দর্শন দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছেন। উমাইয়া শাসনামলে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের সংস্পর্শে আসে। সুতরাং বাহ্যিক উৎসও মুসলিম দর্শনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।