অথবা, ভারতীয় প্রভাব বলতে কী বুঝায়?
অথবা, ভারতীয় প্রভাব কী?
অথবা, মুসলিম দার্শনিকদের উপর ভারতীয় প্রভাব লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : জ্ঞানানুশীলন ও সত্যানুসন্ধানের বিষয় হিসেবে দর্শনের ক্ষেত্র এত ব্যাপক যে, এর কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। তবে দর্শন সম্পর্কে আমরা বলতে পারি যে, জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যা সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক ও বিশ্লেষণী যে দৃষ্টিভঙ্গি তাই দর্শন। মৌলিক সমস্যা বলতে বুঝায় এমন সমস্যা, যা সব মানুষের কাছে একটি জানার বিষয়। যেমন- মূল্য কি? সত্য কি? ভালো কি? মন্দ কি?। তাই আমরা দেখি যে, এসব সমস্যা নিয়ে পাশ্চাত্যের দার্শনিকরা যেমন ভাবিত হয়েছেন তেমনি ভাবিত হয়েছেন মুসলিম দার্শনিকরা। ঐতিহ্যগতভাবে তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সুচিন্তিত মত দিয়েছেন।
মুসলিম দর্শনের ক্রমবিকাশে ভারতীয় প্রভাব : অন্যান্য যেসব বিষয় মুসলিম দর্শনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করেছিল সেগুলোর মধ্যে ভারতীয় প্রভাবের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তবে ভারতীয় চিন্তার মূল স্রোতসমূহ মুসলমানদের কাছে পৌছার পরবর্তী এক পর্যায়ে বিশেষত আব্বাসীয় শাসনামলে ইসলামে দরবেশ ভ্রাতৃত্ব ও মরমি ভাবধারার উদ্ভবের মূলে ছিল ভারতীয় প্রভাব। আব্বাসীয় খলিফাদের রাজত্বকালে ভারতীয় চিন্তাধারার সাথে মুসলমানদের যোগাযোগ ঘটে। বলা হয়ে থাকে, ইসলামের মরমি ও দরবেশী ভাবধারা ভারতীয় প্রভাব হতে উদ্ভূত হয়েছে। কিন্তু আমরা পর্যালোচনা করলে দেখতে পাব যে, ইসলামি মরমিবাদে পারসিক প্রভাব যেমন নেই তেমনি নেই ভারতীয় প্রভাবও নেই। কেননা বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণ ও সুফি দর্শনের ফানা এক জিনিস নয়। প্রথমটি যেখানে নঞর্থক সেখানে দ্বিতীয়টি সদর্থক। ফলে আমরা বলতে পারি যে, মুসলিম দার্শনিকরা অন্যান্য চিন্তা দ্বারা বিশেষ করে ভারতীয় চিন্তাবিদদের সাথে পরিচিত হয়েছেন, কিন্তু তার দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত হয়েছেন তা বলা চলে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তা হতে শিক্ষালাভ করে থাকে। শুধু তাই নয়, একটি জাতির সামগ্রিক বিকাশের জন্য অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এ উভয় দিকের বিকাশের প্রয়োজন। মহামতি এরিস্টটলের মতে, কি দার্শনিক, কি সংস্কৃতি চর্চাকারী সকলেরই দুটি জিনিস প্রয়োজন- ১. সম্পদ ২. অবসর। তাই অর্থনীতি ও সুনীতি উভয়ের যুগপৎ চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমেই সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সম্ভবপর হয়ে উঠবে।