অথবা, পারস্যের প্রভাব বলতে কী বুঝায়?
অথবা, পারস্যের প্রভাব কী?
অথবা, মুসলিম দার্শনিকদের উপর পারস্যের প্রভাব লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : জ্ঞানানুশীলন ও সত্যানুসন্ধানের বিষয় হিসেবে দর্শনের ক্ষেত্র এত ব্যাপক যে, এর কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। তবে দর্শন সম্পর্কে আমরা বলতে পারি যে, জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যা সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক ও বিশ্লেষণী যে দৃষ্টিভঙ্গি তাই দর্শন। মৌলিক সমস্যা বলতে বুঝায় এমন সমস্যা, যা সব মানুষের কাছে
একটি জানার বিষয়। যেমন- মূল্য কি? সত্য কি? ভালো কি? মন্দ কি?। তাই আমরা দেখি যে, এসব সমস্যা নিয়ে পাশ্চাত্যের দার্শনিকরা যেমন ভাবিত হয়েছেন তেমনি ভাবিত হয়েছেন মুসলিম দার্শনিকরা। ঐতিহ্যগতভাবে তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সুচিন্তিত মত দিয়েছেন।
মুসলিম দর্শনের ক্রমবিকাশে পারস্যের প্রভাব : পারস্য জয়ের পর মুসলমানরা পারস্য চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসে। পারস্যের অধিবাসীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল ঠিকই কিন্তু সবসময় সব বিষয়ে যে তারা এ ধর্মের প্রতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুগত ছিল তা বলা চলে না। আরবদের চরিত্রে তখন যুক্ত হয়েছিল এক নতুন জাতির তরতাজা শক্তি ও নতুন ধর্মান্ত রিতদের অগ্নিময় উদ্যম। অপরদিকে, পারস্যবাসী ছিল এক প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির গর্বে গর্বিত অলস জাতি। ফলে দেখা যায় যে, সমাজের উচ্চস্তরের অধিকাংশ পারসীয় ছিলেন মর্যাদা সচেতন এবং নতুন ধর্মের অনুশাসন ও আনুষ্ঠানিকতার প্রতি উদাসীন। প্রাচীন প্রথা ও ঐতিহ্যের প্রতি ছিল তাদের এক অব্যাহত আন্তরিক সহানুভূতি। এ কারণেই ইসলামে তারা প্রয়োগ করে তাদের ফেলে আসা ধর্ম ও ঐতিহ্যের প্রাচীন ধারণা। আমরা তাই দেখি যে, ইসলামি চিন্ত ↑ধারায় তাদের প্রথা ও ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটে। শিয়া সম্প্রদায়ের দর্শনে এবং সুফি দর্শনের পরবর্তী বিকাশে কিছুটা পারসিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ দিক থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভবের জন্য পারসিক প্রভাবকেই দায়ী করা চলে। কিন্তু সুফি মরমিবাদে পারসিক প্রভাব রয়েছে বলা চলে না। কেননা সুফি মত ও পথ কুরআন ও হাদিসে নির্দেশিত। ফলে সুফি দর্শন পারসিক প্রভাব বর্জিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তা হতে শিক্ষালাভ করে থাকে। শুধু তাই নয়, একটি জাতির সামগ্রিক বিকাশের জন্য অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এ উভয় দিকের বিকাশের প্রয়োজন। মহামতি এরিস্টটলের মতে, কি দার্শনিক, কি সংস্কৃতি চর্চাকারী সকলেরই দুটি জিনিস প্রয়োজন- ১. সম্পদ ২. অবসর। তাই অর্থনীতি ও সুনীতি উভয়ের যুগপৎ চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমেই সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সম্ভবপর হয়ে উঠবে।