অথবা, গ্রিক দর্শনের প্রভাব বলতে কী বুঝায়?
অথবা, গ্রিক দর্শনের প্রভাব কী?
অথবা, মুসলিম দার্শনিকদের উপর গ্রিক দর্শনের প্রভাব লিখ ।
উত্তর৷ ভূমিকা : জ্ঞানানুশীলন ও সত্যানুসন্ধানের বিষয় হিসেবে দর্শনের ক্ষেত্র এত ব্যাপক যে, এর কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। তবে দর্শন সম্পর্কে আমরা বলতে পারি যে, জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যা সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক ও বিশ্লেষণী যে দৃষ্টিভঙ্গি তাই দর্শন। মৌলিক সমস্যা বলতে বুঝায় এমন সমস্যা, যা সব মানুষের কাছে
একটি জানার বিষয়। যেমন- মূল্য কি? সত্য কি? ভালো কি? মন্দ কি?। তাই আমরা দেখি যে, এসব সমস্যা নিয়ে পাশ্চাত্যের দার্শনিকরা যেমন ভাবিত হয়েছেন তেমনি ভাবিত হয়েছেন মুসলিম দার্শনিকরা। ঐতিহ্যগতভাবে তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সুচিন্তিত মত দিয়েছেন।
গ্রিক দর্শনের প্রভাব : মুসলিম দর্শনের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে বাইরের প্রভাব যতটুকু কার্যকরী হয়েছে তার মধ্যে গ্রিক দর্শনের প্রভাব অগ্রগণ্য। গ্রিক দর্শনের পিথাগোরাস, প্লেটো, এরিস্টটল ও নব্য প্লেটোবাদীদের দর্শন মুসলিম দার্শনিকদের দর্শন চিন্তার রসদ সরবরাহ করে। খলিফা আল মামুনের সময়েই মুসলমানদের মধ্যে গ্রিক দর্শন পঠনপাঠন শুরু হয় । শুধু তাই নয়, কয়েকটি বিশেষ গ্রন্থ আরবিতে ভাষান্তরিত হয়। আর এ সময়েই ফালাসিফা চিন্তাগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। তবে মুসলিম চিন্তাবিদগণ তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছেন নিজেদের স্টাইলে। সমগ্র মধ্যযুগে মুসলমানরা জ্ঞানবিজ্ঞানে, দর্শনে, স্থাপত্যে, সংগীতে, সংস্কৃতিতে সুউচ্চ আসন লাভ করেছিল। আধুনিক ইউরোপীয় জ্ঞানবিজ্ঞান ও দর্শন পরম শ্রদ্ধার সাথে তাদের মৌলিক ও যুগান্তকারী অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। তাই মধ্যযুগের গতিশীল, সৃষ্টিশীল জাতি হিসেবে মুসলিম চিন্তাবিদগণ বাহির হতে যা নিয়েছে তার চেয়ে দিয়েছেন অনেক বেশি। বলা হয়ে থাকে, আলেকজান্ডারের অভিযানের পর গ্রিক চিন্তাধারা প্রাচ্যের দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর রাজ্যসমূহ সেলুকাস ও টলেমির ন্যায় দু’ভাগে ভাগ করে নেন। এশিয়া মহাদেশের রাজ্যগুলো সেলুকাসের ভাগে পড়ে এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন সেলুসিয়া ও এন্টিওক গ্রিক শিক্ষা ও কৃষ্টির কেন্দ্রে পরিণত হয়। টলেমির অধীনে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রিক শিক্ষার অপর কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। হুজুরে পাক (স) এর ইন্তেকালের অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে গ্রিক দর্শন ও বিজ্ঞান শিক্ষার কেন্দ্রগুলো মুসলমানদের শাসনাধীনে চলে আসে এবং এর ফলে মুসলমানরা গ্রিক চিন্তার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসে। আব্বাসীয় শাসনামলে আল মামুনের রাজত্বকালে বিভিন্ন গ্রিক গ্রন্থ অনূদিত হয়। তবে উল্লেখ্য যে, মুসলমানরা সিরীয় ভাষাভাষী নব্য প্লেটোবাদীদের থেকে জ্ঞানবিজ্ঞান ও দর্শন সম্পর্কে অবহিত হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তা হতে শিক্ষালাভ করে থাকে। শুধু তাই নয়, একটি জাতির সামগ্রিক বিকাশের জন্য অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এ উভয় দিকের বিকাশের প্রয়োজন। মহামতি এরিস্টটলের মতে, কি দার্শনিক, কি সংস্কৃতি চর্চাকারী সকলেরই দুটি জিনিস প্রয়োজন- ১.
সম্পদ ২. অবসর। তাই অর্থনীতি ও সুনীতি উভয়ের যুগপৎ চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমেই সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সম্ভবপর হয়ে উঠবে।