উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু ব্যাঙ্গ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী আবুল মনসুর আহমদ বিরচিত ‘হুযুর কেবলা’ শীর্ষক ছোটগল্প
থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : পীর সাহেব চাতুর্যপূর্ণ এ কথার মাধ্যমে মুরিদদের মাঝে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে প্রয়াসী হয়েছেন।
বিশ্লেষণ : খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এমদাদ ধর্মকর্মে গভীরভাবে মনোযোগী হয়ে পড়ল। সে বাড়াবাড়ি রকমের নামায পড়তে শুরু করল। নফল নামাযে সে একেবারে তন্ময় হয়ে গেল। নিজের হাতে তসবিহ তৈরি করে তা গুণে হাতের আঙ্গুল ক্ষয়ে ফেলল। দেহের কৃচ্ছতাসাধন শুরু করল। এত কিছুর পরেও এমদাদ এবাদতে নিষ্ঠা আনতে পারল না। তখন সে সুফি সাহেব নামে খ্যাত স্থানীয় এক পীর সাহেবের খলিফার কাছে তার মনের বেদনা খুলে প্রকাশ করল। সুফি সাহেব তাকে কামেল পীরের মুরিদ হবার জন্য পরামর্শ দিল। এক পর্যায়ে সে এমদাদকে নিয়ে তার নিজের পীরের কাছে হাজির হলো। ঘটনাক্রমে পীর সাহেব এমদাদকে ‘আহা, বড় গরিব বলে’ করুণা প্রদর্শন করেন। তখন সুফি সাহেব আমতা আমতা করে বলে, ‘হযরত, এর অবস্থাতত গরিব নয়। বেশ ভালো তালুক সম্পত্তি’। পীর সাহেব নিজের ভুল হচ্ছে দেখে সাথে সাথে গরিব শব্দটির আলাদা প্রশ্ন করে মুরিদদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, “বেটা, তোরা আজিও দুনিয়ার ধন-দওলৎ দিয়া ধনী-গরিব বিচার করিস। এটা তোদের বুঝিবার ভুল। আমি গরিব কথায় দুনিয়াবী গোরবৎ বুঝাই নাই। মুসলমানের জন্য ধন-দণ্ডলৎ হারাম।” কেননা এ ধন-দওলৎ মানুষের রুহানিয়ত হাসিলের পথে বাধা জন্মায়। তার মধ্যে নফরমানিয়ত পয়দা করে। আরবি ও উর্দু মিশিয়ে তিনি আরও বলেন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- বেশক দুনিয়ার ধন-দওলৎ শয়তানের ওয়াসা। এ ওয়াসা হতে দূরে পলায়ন কর। এভাবেই তিনি নিজের একটি ভুলকে চাপা দিতে জনগণকে অসংখ্য ভুলের মধ্যে ঠেলে দেন।
মন্তব্য : ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতের ধর্মের অপপ্রশ্নর ফলে জনগণ প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়।