[ad_1]
👉 মুদ্রা বাজার কাকে বলে ? বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের কার্যকারিতা আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : মুদ্রা বাজার মূলত স্বল্পমেয়াদি ঋণের লেনদেনের কারবার করে এবং মূলধন বাজার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের লেনদেনের কারবার করে । যে কোন প্রতিষ্ঠানের উভয় ধরনের ঋণের প্রয়োজন হয় । স্বল্পমেয়াদি ঋণের আদানপ্রদানের জন্য সাধারণত মুদ্রা বাজার কাজ করে । দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আদানপ্রদানের জন্য সাধারণত মূলধন বাজার কাজ করে । মুদ্রা বাজার ও মূলধন বাজার উভয়ই ঋণ নিয়ে কারবার করে । এদিক থেকে বিচার করলে মুদ্রা বাজার ও মূলধন বাজার উভয়ই পরস্পর নির্ভরশীল এবং একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে ।
মুদ্রা বাজারের সংজ্ঞা : যে বাজারে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে অর্থের লেনদেন হয় তাকে মুদ্রা বাজার বলে । স্বল্প মেয়াদ বলতে সাধারণত ১ বছরের বা তার কম সময়কালকে বুঝায় ।
বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের কার্যকারিতা : মুদ্রা বাজার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । উন্নত ও • সুসংহত মুদ্রা বাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে ।
নিম্নরূপে বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. মূলধন সংগ্রহ : মুদ্রা বাজারের অন্যতম কাজ হলো মূলধন সংগ্রহ করা । শেয়ার , ডিবেঞ্চার ও অন্যান্য সিকিউরিটি বিক্রি করে মুদ্রা বাজার মূলধন গঠনে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে থাকে ।
২. বাণিজ্যিক ব্যাংকে সহায়তা প্রদান : মুদ্রা বাজার বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহে নানাভাবে সহায়তা প্রদান করে থাকে । মুদ্রা বাজারের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ তাদের ঋণপত্র ও সিকিউরিটিসমূহ দ্রুত নগদ টাকায় পরিণত করতে পারে । ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্প পরিমাণ রিজার্ভ নিয়েও নিরাপদে ব্যবসায় বাণিজ্য চালিয়ে যেতে সক্ষম হয় । এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহে মুনাফার পরিমাণও বেড়ে যায় ।
৩. শিল্পোন্নয়ন : মুদ্রা বাজার দেশের শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শিল্পোন্নয়ন । শিল্পোন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় । উন্নত মুদ্রা বাজার দেশে শিল্পোন্নয়নের পথ সুগম করে ।
৪. অর্থ লগ্নির সুবিধা : কেউ যদি তার অর্জিত অর্থ লগ্নি করতে চায় , তাহলে মুদ্রা বাজার অর্থ লগ্নিতে সহায়তা প্রদান করে । দেশের ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও মুদ্রা বাজার বিশেষ ভূমিকা পালন করে । মুদ্রা বাজারে সর্বদা শেয়ার , ডিবেঞ্চার , সিকিউরিটি প্রভৃতি ক্রয়বিক্রয় হয় । তাই মুদ্রা বাজারের উপস্থিতির জন্যই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লাভজনক বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয় ।
৫. ঋণের যোগান : মুদ্রা বাজার স্বল্পমেয়াদি ঋণের যোগান দেয় । বিভিন্ন রকম বিনিয়োগকারী তাদের ব্যবসায়কে সচল রাখার জন্য মুদ্রা বাজার থেকে ঋণ নিয়ে থাকে । ব্যবসায়ীরা স্বল্পমেয়াদি ঋণ সংগ্রহ করে তাদের ব্যবসায় বাণিজ্যের চাকা সচল রাখতে পারে ।
৬. অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা: দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মুদ্রা বাজার দেশের অর্থনীতির দর্পণ হিসেবে কাজ করে । দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে মুদ্রা বাজারে এর প্রতিফলন ঘটে থাকে । সুতরাং মুদ্রা বাজারের গতিবিধির দিকে লক্ষ্য রেখে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যকর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।
৭. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বময় কর্তৃত্ব : মুদ্রা বাজারের অন্যতম কার্যাবলি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সর্বময় কর্তৃত্ব হিসেবে মেনে নেয়া । মুদ্রা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয় ।
৮. বৃহদায়তন : মুদ্রা বাজার অনেক সময় বড় আকারের ঋণদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে । এ ব্যবস্থা ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে ।
৯. মুদ্রাস্ফীতি রোধ : আধুনিক কালে ব্যাংক ঋণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ । সুতরাং ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রা বাজার দেশের মুদ্রাস্ফীতি রোধে সহায়তা করতে পারে । তাছাড়া উন্নত মুদ্রা বাজার বৈদেশিক মূলধন আকর্ষণ করে দেশে মূলধনের যোগান বৃদ্ধি করতে পারে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে আমরা একথা বলতে পারি , মুদ্রা বাজার স্বল্পমেয়াদি ঋণদান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আমাদের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণের প্রয়োজন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । আমাদের ঋণদান সংস্থাগুলোকে সুসংহত ও উন্নত করতে হলে মুদ্রা বাজারকে সুসংহত করতে হবে । উন্নয়নশীল অর্থনীতির আর্থিক প্রয়োজন মিটাতে হলে আমাদের মুদ্রা বাজারের উন্নতি সাধন করা একান্ত অপরিহার্য ।
[ad_2]