অথবা, মুতাজিলা কারা?
অথবা, মুতাজিলা বলতে কাদের বুঝানো হয়?
অথবা, মুসলিম দর্শনে মুতাজিলা সম্প্রদায় কারা?
অথবা, মুতাজিলা সম্প্রদায়ের পরিচয় দাও।
উত্তরা৷ ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দীতে মুতাজিলা সম্প্রদায়ের যুক্তিবাদিতা ও উদারনৈতিক চিন্তাধারা বহু পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ বিশেষ করে ইউরোপীয় চিন্তাবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মুতাজিলারা ইসলামের প্রথম সম্প্রদায় যারা ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে দার্শনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। মুতাজিলাদের প্রথম ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে প্রথম হিজরির শেষ ভাগে।
মুতাজিলা সম্প্রদায় : মুতাজিলা শব্দের অর্থ দল ত্যাগকারী। কাদারিয়া চিন্তা নিয়ে এবং খারিজিদের উগ্র ধর্মান্ধতা ও ধর্ম শিথিল মুরাজিয়াদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মনীষী ওয়াসিল বিন আতা এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি ছিলেন মনীষী হাসান আল বসরীর শিষ্য। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে, যা সেদিনের যুগধর্ম ও প্রতিবাদী পরিবেশের নির্দেশক। ঘটনাটি হচ্ছে একদিন এক ব্যক্তি ইমাম হাসান-আল-বসরীকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি কেউ কবীরা গুণাহ করে, তবে সে মুসলিম দাবি করতে পারবে না। মুনাফেক হয়ে যাবে? ইমাম উত্তর দিলেন যে, সে মোনাফেক হয়ে যাবে। কিন্তু ইমামের শিষ্য ওয়াসিল-বিন-আতা এ মতের সাথে একমত হতে পারলেন না। তিনি বললেন, সে ব্যক্তি মুসলমানও থাকবে না, অমুসলমানও হবে না, সে এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করবে। ইমাম হাসান আল বসরী এ মত প্রত্যাখ্যান
করলেন এবং শিষ্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ইতাযিলা আন্না’ অর্থাৎ, সে আমাদের দল ত্যাগ করেছে। ইমামের এ মন্ত ব্যের কারণেই ওয়াসিল বিন আতা প্রবর্তিত সম্প্রদায়ের নাম হয়েছে মুতাজিলা সম্প্রদায়। মুতাজিলাগণই প্রথমে ইসলামে স্বাধীন চিন্তাধারার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন। অবশ্য এ ব্যাপারে কাদারিয়া সম্প্রদায় ছিল তাদের পথিকৃৎ। কেউ কেউ এ সম্প্রদায়ের নামকরণ সম্পর্কে ভিন্নমত শোষণ করেন। এক্ষেত্রে অধ্যাপক নালিনো (Prof
Nallino) এর মত উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, খারিজিদের মতে, কোন মুসলমান বড় রকমের গুণাহ করলে কাফের হয়ে যায়। মুরজিয়াদের মতে, উক্ত অবস্থায় কোন মুসলমান ইসলাম হতে খারিজ হতে পারে না। কিন্তু স্বাধীন চিন্তাবিদ মুতাজিলারা এই দুই মত ত্যাগ করে মধ্যপথ গ্রহণ করেন এবং সে কারণে তারা মুতাজিলা অর্থাৎ দল ত্যাগকারী নামে খ্যাত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামি ভাবধারার বিপরীতে মুতাজিলারা শুধু মৌখিক ভাবেই নয়, ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কার্য প্রয়োগের মাধ্যমে প্রচার চালায়। মুতাজিলা সম্প্রদায়ের গুরুত্বকে মুসলিম দর্শনে অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং মুসলিম দর্শনে তাদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।