অথবা, মুতাজিলারা বুদ্ধিবাদী কী না?
অথবা, মুতাজিলাদের বুদ্ধিবাদী বলার কারণ কী?
অথবা, কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য মুতাজিলাদের বুদ্ধিবাদী বলা হয়?
অথবা, মুতাজিলারা কী বুদ্ধিবাদী?
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শনে যে কয়টি দার্শনিক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে তাদের মধ্যে মুতাজিলা সম্প্রদায় অন্যতম। এ সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে প্রথম হিজরির শেষ ভাগে। এ সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল পুরোপুরি বুদ্ধিভিত্তিক, মুতাজিলারা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যবর্তী অবস্থানের মতটি পোষণ করেন বলে তাদেরকে মুতাজিরা বলে অভিহিত করা হয়।
মুতাজিলা বুদ্ধিবাদী কী না : মুতাজিলাদেরকে ইসলামে প্রথম বুদ্ধিবাদী বলা হয়। তারাই প্রথম বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে মৌলিক সমস্যাগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং সে সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত অভিমত দিয়েছেন। তারা যেসব মৌলিক সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর গুণাবলি,
দিকদর্শন, ইচ্ছার স্বাধীনতা, কুরআনের নিত্যতা, মঙ্গল ও অমঙ্গল প্রভৃতি। আল্লাহর গুণাবলিকে শুধু সরল বিশ্বাসে মেনে.নেন নি, তারা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর গুণাবলি সম্পর্কিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেছেন। তারা দেখেছেন যে, আমরা যদি আল্লাহর মতো তার গুণাবলিকে শাশ্বত সত্তা বলে মেনে নিই, তাহলে একটি যৌত্ত্বিক বা তাত্ত্বিক অসুবিধা দেখা দেয়। সেটি হলো আল্লাহর পাশাপাশি আরো একটি সত্তা নিত্য হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহই নিত্য। আর কোন সত্তা নিত্য হতে পারে না। অর্থাৎ তারা প্রত্যাদেশকে যুক্তির মাধ্যমে বিচার করতে চেয়েছেন। আর সেজন্য তারা কুরআনের নিত্যতাকে অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, কুরআনকে নিত্য বললে আমরা শিরক করে ফেলব। তাই তাদের মতে, কুরআন সৃষ্ট। অর্থাৎ মুতাজিলারা বিশ্বাসকে যুক্তির কষ্টিপাথরে বিচার করতে চেয়েছেন। আমরা জানি যে, বিশ্বাস যুক্তি দ্বারা তার ভিত্তিকে মজবুত করে নিতে পারে। সে বিশ্বাসে অটল থাকতে বিশ্বাসকারীর কোন অসুবিধা হয় না। আর সে বিশ্বাসের মাধ্যমে সে নিজেকে যেমন আলোকিত করতে পারে, তেমনি পারে অন্যকে। এ বিশ্বাস আলোকিত বিশ্বাস বা Enlighten belief। মুতাজিলারা সে বিশ্বাসের কথা বলেছেন যে বিশ্বাস শুধু নিছক বিশ্বাস হবে না, সে বিশ্বাস হবে যুক্তি দ্বারা পরিশোধিত। যুক্তির আলোকে তাদের বিশ্বাসের এ প্রয়াসকে Enlighten belief বলা যেতে পারে। তাই নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি যে, মুতাজিলারা বুদ্ধিবাদী ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাজিলারা প্রথমত বুদ্ধিকে অস্বীকার করলেও চূড়ান্ত বিচারে বুদ্ধিকে গ্রহণ করেছেন। আর এজন্য তারা বুদ্ধিবাদী দার্শনিক সম্প্রদায় বলে বিবেচিত হন। সুতরাং মুতাজিলাদের বুদ্ধিবাদের গুরুত্বকে মুসলিম দর্শনে অস্বীকার করা যায় না।