অথবা, ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকার সম্পর্কে লিখ।
অথবা, মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে বা জান সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা হয় ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি শসস্ত্র বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ডকে প্রতিহত করতে বাঙালিরা শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। আর একে সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা দিতে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সাংবিধানিক ঘোষণাকল্পে অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। এ অস্থায়ী সরকারই মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।
মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি সাংবিধানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের কথা বলা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এ সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর উপর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিবৃন্দ, দেশি, বিদেশি বহুসংখ্যক সাংবাদিক, বিপুলসংখ্যক স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতিতে ঐ অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে এ ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে মেহেরপুরের তলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এ স্থান ছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাজধানী। আর এ অস্থায়ী সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল একটি অনিবার্য, অপরিহার্য উপাদান। তাই ঐ সময় পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী থাকা সত্ত্বেও তাঁর নামেই মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে শপথ নিতেন। বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধ চলে। অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকেই প্রধান করে অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয় বাংলাদেশকে ক্রান্তিকালীন অভিভাবকত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার বিধানকল্পে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে ১১ সেক্টরে ভাগ করা হয়। মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে।