মুঘল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মুঘল স্থাপত্য ভারতীয় স্থাপত্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। প্রাচীন ভারতীয় ও সুলতানি আমলের স্থাপত্যের চেয়ে মুঘল স্থাপত্য সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মুঘল
সম্রাটগণ ছিলেন স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক। সম্রাট শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের শাসনামলে অধিকাংশ স্থাপত্য তৈরি হয়েছে। মুঘলদের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা, উদার মানসিকতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় মুঘল স্থাপত্যশিল্প অনেক উন্নত হয়েছে।
মুঘল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে মুঘল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. পারস্য প্রভাব : মুঘল স্থাপত্যে পারস্য স্থাপত্যরীতির প্রভাব লক্ষ করা যায় । সম্রাট হুমায়ুনের স্থাপত্যে পারস্যরীতির অনুকরণ বেশি পরিলক্ষিত হয়। আগ্রা জামে মসজিদ এবং পাঞ্জারে নির্মিত মসজিদে মিনা বায়াটালির ব্যবহার পারস্যরীতির অনুকরণে করা হয়েছে। হুমায়ুনের সমাধিতেও পারস্যরীতির অলংকরণ করা হয়েছে।
২. হিন্দুরীতির অনুকরণ : অনেক মুঘল স্থাপত্যে হিন্দুরীতির প্রভাব লক্ষ করা যায়। আগ্রা ও ফতেপুর সিক্রির প্রাসাদ, বুলন্দ
দরওয়াজা, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস প্রভৃতি স্থাপত্যে হিন্দুরীতির প্রভাব রয়েছে। মুঘল আমলে নির্মিত স্তম্ভে হিন্দুরীতির
প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
৩. দ্বি-গম্বুজের ব্যবহার : সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিতে প্রথম দ্বি-গম্বুজের ব্যবহার করা হয়। একটি বাল্বের আকৃতিতে মার্বেল দ্বারা গম্বুজ দুটি আবৃত। এর অভ্যন্তরে একটি গোলাকার ড্রাম থেকে উপরে উঠে গেছে। এর স্থাপত্যরীতি পারস্য ও মধ্য এশিয়ার অনুকরণে করা হয়েছে।
৪. শ্বেত পাথরের ব্যবহার : মুঘল স্থাপত্যরীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্বেত পাথরের ব্যবহার। সম্রাট আকবরের আমলে নির্মিত সাধক সেলিম চিশতির সমাধিসৌধ, ফতেহপুর
সিক্রির প্রাসাদ, হুমায়ুনের সমাধি প্রভৃতি স্থাপনায় শ্বেত মর্মর পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। তাজমহল, দিল্লি জামে মসজিদেও
শ্বেত পাথরের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
৫. লাল পাথরের ব্যবহার : মুঘল স্থাপত্যে লাল পাথরের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছে। ফতেপুর সিক্রির বেশিরভাগ স্থাপনায় লাল পাথরের ব্যবহার দেখা যায়। বুলন্দ দরওয়াজা, তাজমহল, দিল্লি জামে মসজিদ, লাল কেল্লা প্রভৃতি স্থাপনায় লাল পাথরের
ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। সম্রাট আকবর এবং শাহজাহানের আমলের স্থাপনায় লাল পাথরের ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পারস্য, মধ্য এশিয়া এবং হিন্দুরীতি দ্বারা প্রভাবিত হলেও মুঘল স্থাপত্য পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রভাবে মুঘল স্থাপত্যশিল্পের গঠনশৈলী সৌন্দর্য, অলংকরণ পদ্ধতি প্রভৃতি অপূর্ব শিল্প নৈপুণ্যের পরিচায়ক। মুঘলদের অনিন্দ্য সুন্দর গঠন বৈশিষ্ট্যের স্থাপনাগুলো আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%98%e0%a6%b2-%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae/