ভূমিকা উত্তর : আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার
বাংলা অভিযান ছিল বাংলার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃবিরোধকালে মীর জুমলা করেন। তারই সাহায্যে আওরঙ্গজেবের পক্ষ অবলম্বন আওরঙ্গজেব সুজার বিরুদ্ধে বাংলার অভিযান পরিচালনা করে জয় লাভ করেন। মীর জুমলার বাংলা অভিযানের সফলতার জন্য আওরঙ্গজেব তাকে খান-ই-খানান ও সিপাহসালার উপাধিতে ভূষিত করে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। নিম্নে মীর জুমলার বাংলার অভিযানের ঘটনাবলি তুলে ধরা হল :
মীর জুমলার বাংলা অভিযানের ঘটনা :
১. খাজুয়ার যুদ্ধ : সুজা দিল্লির সিংহাসন লাভের জন্য আওরঙ্গজেবের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়। ১৬৫৯ সালে খাজুয়া প্রান্তরে আওরঙ্গজেবের জ্যৈষ্ঠ পুত্র মুহাম্মদ ও বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর জুমলা সুজাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে।
২. মীর জুমলার রাজমহল অধিকার : খাজুয়ার যুদ্ধের পর মীর জুমলা সুজাকে অনুসরণ করে তেলিয়াগড়ি পৌঁছেন। মীর জুমলা ঝাড়খণ্ডের মধ্য দিয়ে গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত বেলঘাটায় উপস্থিত হন এবং ১৬৫৯ সালে রাজমহল অধিকার করেন।
৩. সুজাকে অবরুদ্ধ : বর্ষা মৌসুমে মীর জুমলা স্থানীয় জমিদারদের সাহায্যে নৌবহর প্রস্তুত করেন। বিহারের দাউদখানের নৌবহরের সাহায্যে মীর জুমলা রাজমহল হতে গঙ্গা নদী পার হয়ে সামদাহ নামক স্থানে পৌছেন এবং ১৬৬০ সালে সুজাকে ঘিরে ফেলেন।
৪. সুজার পলায়ন : মীর জুমলা ও দাউদ খানের সৈন্যবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সুজা তান্ডা হতে জাহাঙ্গীরনগর পলায়ন করেন। মীর জুমলা তাকে অনুসরণ করে কিন্তু স্থানীয়।জমিদাররা সুজার পক্ষ ত্যাগ করে। উপায়ন্তর না দেখে শাহ সুজা দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার হাতে পরাজিত হন। ১৬৬০ সালে বাংলা ছেড়ে
আরকানে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই তিনি আরাকানীদের হাতে নিহত হন। ফলে ১৬৬০ সালে জসালে মীর জুমলা জাহাঙ্গীরনগর দখল করেন।
উপসংহার : শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যেকার উত্তরাধিকার যুদ্ধে আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা বাংলার সুবাদার সুজাকে পরাজিত করে বাংলায় সম্রাট আওরঙ্গজেবের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে সম্রাট মীর জুমলাকে বাংলার সুবাদার নিয়োগ করেন এবং সাত হাজার মনসব প্রদান করে পুরস্কৃত করেন। অল্প সময়ের মধ্যে মীর জুমলা বাংলায় সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রচলন করেন।