অথবা, সবিকল্প প্রত্যক্ষ সম্পর্কে মীমাংসকদের মত কী?
অথবা, সবিকল্প প্রত্যক্ষ সম্পর্কে মীমাংসা মতবাদ কী?
অথবা, মীমাংসা দার্শনিকরা সবিকল্প প্রত্যক্ষণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক’ স্কুলসমূহের মধ্যে মীমাংসা দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মহর্ষি জৈমিনি মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. নীতি ও ধর্ম (Ethics and Religion)। প্রমাণ হলো যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালি বা উপায়। মীমাংসা দর্শনে প্রমাণ ছয় প্রকার। যথা : ১. প্রত্যক্ষ, ২. অনুমান, ৩. শব্দ, ৪. উপমান, ৫. অর্থাপত্তি এবং ৬. অনুপলব্ধি। মীমাংসা মতে, কোন সৎ (অস্তিত্বশীল) বস্তুর সাথে ইন্দ্রিয়ের সংযোগ ঘটলে যে জ্ঞান হয়
তাই প্রত্যক্ষ জ্ঞান। প্রত্যক্ষ দুই প্রকারের। যথা : (ক) নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ (Indeterminate Perception) ও (খ) সবিকল্প প্রত্যক্ষ (Determinate Perception)।
সবিকল্প প্রত্যক্ষ (Determinate Perception) : আমাদের অতীত জ্ঞানের ভিত্তিতে অর্থাৎ নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে বস্তুটিকে যখন ব্যাখ্যা করা হয়, অর্থাৎ বস্তুটির জাতি, ধর্ম, ক্রিয়া প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান হয় তখন তাকে সবিকল্প প্রত্যক্ষ বলা হয়। সবিকল্প প্রত্যক্ষ জ্ঞানকে বচনের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। যেমন- কোন একটি বস্তুকে প্রত্যক্ষ করে আমরা বলি যে, এটি একটি মানুষ, তার রং কাল, সে লম্বাকৃতি ইত্যাদি। মীমাংসকদের মতে নিবিকল্প এবং সবিকল্প একই বস্তুর প্রত্যমে দুটি স্তর মাত্র। নির্বিকল্প হলো প্রথম স্তর আর সবিকল্প হলো দ্বিতীয় স্তর এবং নির্বিকল্প ছাড়া সর্বিকল্প প্রত্যক্ষ সম্ভব নয়। মীমাংসকদের মতে, সবিকল্প প্রত্যক্ষের ভিত্তিই হলো নির্বিকল্প প্রত্যক্ষ। তাদের মতে, সবিকল্প প্রত্যক্ষে বস্তুর যে সকল গুণ, ক্রিয়া প্রভৃতি উপলব্ধি করি তা আমাদের কল্পিত নয়। যদিও বৌদ্ধ এবং কোন বৈদান্তিক মনে করেন যে, সেগুলো বস্তুগত, অর্থাৎ বস্তুতেই অবস্থান করে। সবিকল্প প্রত্যক্ষেও আমরা তাদের উপলব্ধি করি। তবে ঐ স্তরে আমাদের উপলব্ধি হয় অস্পষ্ট। নির্বিকল্প প্রত্যক্ষে যা নেই তা সবিকল্প প্রত্যক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। উভয় প্রকার প্রত্যক্ষের মধ্যে পার্থক্য হলো এ যে, নির্বিকল্প প্রত্যক্ষে যা প্রচ্ছন্ন থাকে তা সবিকল্প প্রত্যক্ষে প্রকট হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকরা তাঁদের প্রমাণ সম্পৰ্কীয় মতবাদে প্রত্যক্ষ প্রমাণের খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন। যে কোনভাবে জ্ঞান লাভ করতে হলেই প্রমাণ চলে আসে। আর প্রমাণ সম্পর্কীয় মতবাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রমাণ ভারতীয় দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।