মীমাংসা দর্শনের পদার্থ সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, পদার্থ সম্পর্কে মীমাংসকদের মত আলোচনা কর।
অথবা, পদাৰ্থ সম্পর্কে মীমাংসা মতবাদ আলোচনা কর।
অথবা, পদার্থ সম্পর্কে বৈশেষিক মতের সঙ্গে মীমাংসা মতের পার্থক্য আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে মীমাংসা দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মহর্ষি জৈমিনি মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠাতার নামানুসারে মীমাংসা দর্শনের আর এক নাম ‘জৈমিনি দর্শন’। মীমাংসা দর্শন বেদের পূর্বকাণ্ড বা কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। আলোচনার সুবিধার্থে মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. নীতি ও ধর্ম (Ethics and Religion)। প্রমাণ হলো যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালি বা উপায়। তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় মীমাংসা দর্শন পদার্থ সম্পর্কে আলোচনা করেছন । নিম্নে মীমাংসা দর্শনের পদার্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
পদার্থ : মীমাংসকগণ মুখ্যত পদের অর্থের নাম পদার্থ, অর্থাৎ কোন পদ দ্বারা যে অর্থ নির্দিষ্ট হয় তাই পদার্থ । বৈশেষিকগণ বর্ণিত পদার্থ এবং তাদের শ্রেণিবিভাগ গ্রহণ করেছেন। তবু মীমাংসা ও বৈশেষিক দর্শনের মধ্যে পদার্থ সম্পর্কে কিছুটা মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।
প্রথমত, প্রভাকর অভাব বলে কোন স্বতন্ত্র পদার্থের অস্তিত্ব স্বীকার করেন নি। তাঁর মতে, অভাব অধিকরণস্বরূপ। যেমন- ঘরে সাজ-সরঞ্জামের অভাবের অর্থ হলো ঘরটি শূন্যঘর।
দ্বিতীয়ত, বৈশেষিক মতে পদার্থ সাত প্রকারের। কিন্তু প্রভাকরের মতে প্রদার্থ আট প্রকারের। যথা : ১. দ্রব্য, ২. গুণ, ৩. কর্ম, ৪. সামান্য, ৫. পরতন্ত্রতা, ৬. শক্তি, ৭. সংখ্যা এবং ৮. সাদৃশ্য। প্রবাকর বর্ণিত পদার্থের নাম হতে বুঝা যায় বৈশেষিকদের সঙ্গে প্রভাকরের মতপার্থক্য কেবল পদার্থের সংখ্যা নিয়ে নয়, পদার্থের নামের ব্যাপারেও আছে।
তৃতীয়ত, বৈশেষিক মতে দ্রব্য নয় প্রকারের, যথা : ১. ক্ষিতি, ২. অপ (পানি), ৩. তেজ, ৪. মরুৎ (বায়ু), ৫. ব্যোম (আকাশ), ৬. দিক (দেশ), ৭. কাল, ৮. আত্মা ও ৯. মন। কিন্তু কুমারিল ভট্ট বৈশেষিক বর্ণিত নয়টি দ্রব্য ভিন্ন আরো দুটি দ্রব্য স্বীকার করেন । সেই দুটি হলো অন্ধকার ও শব্দ।
চতুর্থত, বৈশেষিক মতে, গুণ চব্বিশ রকমের। যথা : ১. রূপ, ২. রস, ৩. গন্ধ, ৪. স্পর্শ, ৫. শব্দ, ৬. সংখ্যা, ৭. পরিমাণ, ৮. পৃথকত্ব, ৯. সংযোগ, ১০. বিভাগ, ১১. পরত্ব, ১২. অপরত্ব, ১৩. বুদ্ধি, ১৪. সুখ, ১৫. দুঃখ, ১৬. ইচ্ছা, ১৭.
দ্বেষ, ১৮. প্রযত্ন, ১৯. গুরুত্ব, ২০. দ্রব্যত্ব, ২১. স্নেহ, ২২. সংস্কার, ২৩. ধর্ম এবং ২৪, অধর্ম। আর প্রভাকরের মতে গুণ বাইশ রকমের। যথা : ১. রূপ, ২. রস, ৩. গন্ধ, ৪. স্পর্শ, ৫. শব্দ, ৬. পরিমাণ, ৭. পৃথকত্ব, ৮. সংযোগ, ৯. বিভাগ, ১০. পরত্ব, ১১. অপরত্ব, ১২. বুদ্ধি, ১৩. সুখ, ১৪. দুঃখ, ১৫. ইচ্ছা, ১৬. দ্বেষ, ১৭. প্রযত্ন, ১৮. গুরুত্ব, ১৯. দ্রব্যত্ব, ২০. স্নেহ, ২১. সংস্কার, ২২. ধর্ম । অর্থাৎ প্রভাকরের মতে সংখ্যা ও অধর্ম দ্ৰব্য নয়। পদার্থের সংখ্যার ব্যাপারে প্রভাকর এবং কুমারিলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
প্রথমত, প্রভাকরের মতে, পদার্থ আট প্রকারের। আর কুমারিলের মতে, পদার্থ পাঁচ প্রকারের। যথা : ১. দ্রব্য, ২. গুণ, ৩. কর্ম, ৪. সামান্য এবং ৫. অভাব। কুমারিলের মতে এ পাঁচটি পদার্থের প্রথম চারটি ভাবাত্মক এবং শেষেরটি অভাবাত্মক পদার্থ। কুমারিল অভাব পদার্থকে আবার চারভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ১. প্রগভাব, ২. ধ্বংসাভাব, ৩.
অন্যোন্যাভাব এবং ৪. অত্যন্তাভাব।
দ্বিতীয়ত, প্রভাকরের মতে, শক্তি, সংখ্যা ও সাদৃশ্য স্বতন্ত্র পদার্থ। কিন্তু কুমারিলের মতে, শক্তি ও সংখ্যা দ্রব্যের গুণ। আর সাদৃশ্য হলো দুই বা ততোধিক বস্তুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সুতরাং কুমারিল শক্তি, সংখ্যা ও সাদৃশ্যকে স্বতন্ত্র পদার্থ বলে স্বীকার করেন না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকরা তাঁদের তত্ত্ববিদ্যা সম্পর্কীয় মতবাদে পদার্থ সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন। যে কোনভাবে জ্ঞান লাভ করতে হলেই প্রমাণ চলে আসে। তাইতো মীমাংসা দর্শনের পদার্থ সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a6%be/