অথবা, নীতিতত্ত্ব সম্পর্কে মীমাংসকদের মত আলোচনা কর।
অথবা, নীতিতত্ত্ব সম্পর্কে মীমাংসা মতবাদ আলোচনা কর।
অথবা, পরম পুরুষার্থ সম্পর্কে মীমাংসকদের মত আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে মীমাংসা দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মহর্ষি জৈমিনি মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠাতার নামানুসারে মীমাংসা দর্শনের আর এক নাম ‘জৈমিনি দর্শন’। মীমাংসা দর্শন বেদের পূর্বকাণ্ড বা কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। আলোচনার সুবিধার্থে মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. ধর্মতত্ত্ব ও নীতিতত্ত্ব (Ethics and
Religion)। নিম্নে মীমাংসা দর্শনের নীতিতত্ত্ব বা পরম পুরুষার্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
নীতিতত্ত্ব বা পরম পুরুষার্থ : প্রাচীন মীমাংসকদের মতে, স্বর্গ লাভই মানব জীবনের পরম পুরুষার্থ বা চরম লক্ষ্য এবং স্বর্গে অনন্ত সুখ বিরাজ করে। তাঁদের মতে, বেদ নির্দেশিত যজ্ঞ-কর্ম সম্পাদনের দ্বারা স্বর্গপ্রাপ্তি হয়। কিন্তু পরবর্তী মীমাংসকগণ বন্ধনমুক্তি বা মোক্ষকেই জীবনের পরম পুরুষার্থ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলেন, সকাম কর্ম ফলদায়ক এবং এ ফল ভোগের জন্য মানুষকে পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু নিষ্কাম কর্ম কোন ফল প্রসব করে না। তাঁদের মতে, মানুষ যখন বুঝে যে, সমস্ত জাগতিক বস্তুই শেষ পর্যন্ত দুঃখদায়ক তখন তার পক্ষে নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব এবং নিষ্কামভাবে বেদ-নির্দেশিত কর্ম সম্পাদন করলে সেই কর্ম নতুন ফল প্রসব করে না। এমনকি পূর্বসঞ্চিত কর্মফলকেও ক্রমে ক্রমে নষ্ট করে দেয়। ফলে কর্মফল ভোগ করার জন্য মানুষকে আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না এবং তার আত্মা মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করে। মীমাংসকদের মতে, আত্মা স্বরূপত নির্গুণ এবং চৈতন্য আত্মার আগন্তুক গুণ। মুক্তাবস্থায় আত্মা সুখ-দুঃখের অতীত অচেতন দ্রব্যরূপে অবস্থান করে। সুতরাং মুক্ত আত্মার সুখানুভূতির প্রশ্নই উঠে না। মীমাংসকরা বলেন, মানুষ মুক্তি বা
মোক্ষ কামনা করে অনন্ত সুখ ভোগের জন্য নয়, দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির জন্য। তবে পরবর্তীকালে কোন কোন মীমাংসক অদ্বৈত বৈদান্তিকদের মতো আত্মা মুক্ত অবস্থাকে পরিপূর্ণ আনন্দানুভূতির অবস্থা বলে বর্ণনা করেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকরা তাঁদের আলোচনায় নীতিতত্ত্ব সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন। তাইতো মীমাংসা দর্শনের নীতিতত্ত্ব সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।