অথবা, ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে মীমাংসকদের মত আলোচনা কর।
অথবা, ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে মীমাংসা মতবাদ আলোচনা কর।
অথবা, ধর্ম সম্পর্কে মীমাংসকদের মত আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : মহর্ষি জৈমিনি মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠাতার নামানুসারে মীমাংসা দর্শনের আর এক নাম ‘জৈমিনি দৰ্শন’। মীমাংসা দর্শন বেদের পূর্বকাণ্ড বা কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। আলোচনার সুবিধার্থে মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. ধর্মতত্ত্ব ও
নীতিতত্ত্ব (Ethics and Religion)। প্রমাণ হলো যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালি বা উপায়। মীমাংসকগণ তাঁদের তত্ত্ববিদ্যার৷ আলোচনায় পদার্থ, জগৎ, শক্তি ও অপূর্ব এবং আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নিম্নে মীমাংসা দর্শনের ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ধর্মতত্ত্ব : মীমাংসকদের মতে বৈদিক বিধি অনুসারে কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করাই ধর্ম। আর বেদ-নিষিদ্ধ কর্ম করাই অধর্ম। মীমাংসকরা বলেন, বেদ-বিহিত যাগযজ্ঞাদির কর্মই মানুষের কর্তব্য কর্ম। এ কর্ম যে ব্যক্তি সম্পাদন
করেন তিনিই ধার্মিক 1 বৈদিক যুগে অগ্নি, বরুণ প্রভৃতি দেবতার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করা হতো। তখন এ বিশ্বাস ছিল যে, যজ্ঞাভোজী দেবতারা যজ্ঞলাভে তুষ্ট হয়ে যজ্ঞ অনুষ্ঠানকারীদের বাঞ্ছিত ফল প্রদান করতেন। মীমাংসকরা বৈদিক যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠান সমর্থন করলেও যজ্ঞভোজী দেবতাদের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন নি। তাঁরা বলেন, কোন দেবতার নামে যজ্ঞ করা হয় মাত্র, এছাড়া দেবতা বিশেষ কিছু নয়। তাঁদের মতে, যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠান মুখ্য, দেবতা গৌণ। মীমাংসকরা বলেন, যাগযজ্ঞাদি অনুষ্ঠান বেদ-বিহিত বলে আমাদের সম্পাদন করতে হবে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। কোন দেবতাকে তুষ্ট করা, যজ্ঞকারীর কোন স্বার্থসিদ্ধি করা বা নৈতিক উন্নতি সাধন করা-এর কোনটির জন্যই যজ্ঞানুষ্ঠান নয়। যজ্ঞানুষ্ঠান বেদ-নির্দেশিত কর্তব্য বলে একে সম্পাদন করা। মীমাংসকদের মতে, কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করা। মীমাংসকদের এ মত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট-এর অনুরূপ। কান্ট বলেন, কর্তব্যের খাতিরে কর্তব্যকে সম্পাদন করতে হবে (Duty for duty’s sake), অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। তবে কর্তব্য-কর্ম সম্পাদন কোন ফললাভের আশায় না করলেও কর্তব্য-কর্ম সম্পাদনে যে ফললাভ হয়-একথা কান্ট এবং মীমাংসক সম্প্রদায় উভয়ই স্বীকার করেন। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এ যে, কান্ট-এর মতে কর্তব্য-কর্মের শুভ ফল ঈশ্বর প্রদান করেন। আর মীমাংসদের মতে, কর্তব্য-কর্মের শুভ ফল উৎপন্ন হয় কর্ম নিয়ম অনুসারে । উভয়ের মধ্যে আর একটি পার্থক্য হলো এ যে, কান্ট-এর মতে ঈশ্বর কর্তব্যের নির্দেশ দেন। আর মীমাংসকদের মতে, আমরা কর্তব্যের নির্দেশ বেদ হতে পেয়ে থাকি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকরা তাঁদের আলোচনায় ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন। তাইতো মীমাংসা দর্শনের ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।