অথবা, মার্কসীয় শ্রেণির ধারণা বিশ্লেষণ কর।
অথবা, মার্কসীয় শ্রেণি সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক স্তরবিন্যাস। সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে অনেক সমাজবিজ্ঞানীর মত কার্ল মার্ক্সও আলোচনা করেছেন। তিনি সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সমাজের বিবর্তন এবং বিদ্যমান সমাজে পরস্পর স্বার্থবিরোধী দুটি শ্রেণির উপস্থিতির কথা আলোচনা করেন।
মার্কসীয় শ্রেণির ধারণা : মার্ক্সের সামাজিক স্তরবিন্যাস তত্ত্বে ‘শ্রেণি’ ও ‘শ্রেণিসংগ্রাম’ দুটি উল্লেখযোগ্য প্রত্যয়। শ্রেণি হলো আর্থসামাজিক সত্তা যা উৎপাদন উপাদানের সাথে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয়। এ সম্পর্কে অধ্যাপক টি. বি. বটোমোর (Prof. T. B. Bottomore) বলেছেন, “In this theory social classes are defined their relation to the means of production (Ownership or non-ownership) and this becomes the basis of the view that there are in every society two principal confiding classes.” মার্ক্স প্রধান দুটি শ্রেণির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যথা: ১. বুর্জোয়া শ্রেণি এবং ২. প্রলেতারিয়েত শ্রেণি।
মার্ক্স প্রলেতারিয়েত বা সর্বহারাদের দুভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
১. শ্রেণি সচেতনহীন (Class in itsell) : শ্রেণি চেতনাহীন একটি শ্রেণি হিসেবে গড়ে উঠে যাদের সবার আর্থিক অবস্থা একই রকম।
২. শ্রেণি সচেতন (Class for itself) : শোষণের শিকার হতে হতে এক সময় এরা নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন একটি শ্রেণি হিসেবে গড়ে উঠে। মূলত শ্রেণির প্রকৃতি উৎপাদন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। মার্কস মন্তব্য করেছেন, শিল্পায়িত পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজিপতিরা অধিক মুনাফা অর্জন করতে থাকে এবং শ্রমিকরা তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পায় না। শ্রমিকদের শ্রম ছাড়া বিক্রির আর কিছুই থাকবে না। তারা শ্রম, উৎপন্ন দ্রব্য এবং সমাজ থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে। তবে তারা বিপ্লবধর্মী চরিত্রে অবতীর্ণ হবে। প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে তারা নিজেদের পর্যায়ক্রমে সংগঠিত করবে এবং স্বার্থসচেতন শ্রেণিতে পরিণত হবে। তারা বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হবে। সমাজ পুঁজিপতি এবং সর্বহারা এ দুটি বিবদমান শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটলেও তাদের মধ্যে মেরুকরণ অনিবার্য। সর্বহারা শ্রেণি বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিপতি শ্রেণিদের উৎখাত করে সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজে শোষণ এবং শ্রেণিবৈষম্যের অবসান ঘটবে। ক্রমে রাষ্ট্র সাম্যবাদী সমাজে পরিণত হবে। এটাই হলো মার্কসের শ্রেণি এবং স্তরবিন্যাস সম্পর্কিত ব্যাখ্যা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মানবসমাজে কোন উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস হয় নি, বরং সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সর্বজনীন স্তরবিন্যাস আরো জটিল রূপ ধারণ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এ সামাজিক স্তরবিন্যাস নিয়ে আলোচনা করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলো মার্কসের শ্রেণি সম্পর্কিত আলোচনা, যেখানে তিনি ধনতান্ত্রিক সমাজের প্রেক্ষাপটে শ্রেণিতত্ত্ব আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছেন। মার্কস দাসযুগ ও সামন্তযুগের সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে.আলোচনা করলেও পুঁজিবাদী সমাজের প্রেক্ষাপটে তাঁর তত্ত্ব অধিক কার্যকর। অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও মার্কসের শ্রেণিতত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত।