মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি বর্ণনা কর।
অথবা, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে কীরূপ সম্পর্ক রয়েছে? আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: স্বাভাবিকভাবে মনে হয় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে তেমন কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু মার্কিন শাসনব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি প্রযুক্ত হওয়ায় এদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। Prof. S. E. Finer এর মতে, “মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের ক্ষমতা হল একটি ব্যাংকনোটের দু’টি অংশের মত- একটা ছাড়া। অন্যটা অর্থহীন হয়ে পড়ে।”

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক: কংগ্রেসের উপর যেমন রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রপতির উপরও কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তা আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক উপস্থাপন করা হল:

সংগ্রেসের উপর রাষ্ট্রপতির প্রভাব: কংগ্রেসের উপর রাষ্ট্রপতির প্রভাব বিস্তারের কারণগুলো নিম্নে আলোচনা
করা হলো:

১. বাণী প্রেরণ: রাষ্ট্রপতি দেশের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের জন্য অনুরোধ সম্পর্কিত বাণী কংগ্রেসের নিকট পাঠাতে পারেন। রাষ্ট্রপতির এ বাণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রপতি আইন সংবলিত এ বাণী কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে উপস্থাপন করতে পারেন।

২. কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান: রাষ্ট্রপতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য
কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। যে বিষয়ে তিনি অধিবেশন আহ্বান করেন তা আলোচনা করতে বাধ্য থাকে। আবার অনেক সময় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়।

৩. পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শন: রাষ্ট্রপতি সরকারি চাকরি বিতরণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিতরণের মাধ্যমে কংগ্রেসের অনেক সদস্যকে নিজের দিকে টেনে আনতে পারেন। তাছাড়া তিনি কংগ্রেসের সদস্যদের আত্মীয়স্বজনকে কংগ্রেসের নির্বাচন আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন পদে নিয়োগ করতে পারেন। এভাবে তিনি পরোক্ষভাবে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৪. রাষ্ট্রপতির ভেটো প্রয়োগ: রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোন বিল আইনে পরিণত হয় না। কংগ্রেসের উভয় কক্ষে গৃহীত বিলে রাষ্ট্রপতি ভেটো প্রদান করতে পারেন। আবার তিনি কোন বিল সম্পর্কে মতামত না জানিয়ে তা দশদিন আটকে রাখতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ভেটো প্রদান না করে প্রয়োগ করার ভীতি প্রদর্শন করে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৫. দলীয় ব্যবস্থার উত্তব: দলীয় ব্যবস্থার ফলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। তাঁর দলের সদস্যগণ কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে তিনি প্রয়োজনমতো আইন প্রণয়ন করতে পারেন। এভাবে দলীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।

৬. জনমত গঠন: সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন প্রভৃতি গণসংযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি তাঁর আইনের প্রস্তাব ও অন্যান্য বিষয়ে নিজের বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁর নীতি ও কর্মসূচি সমর্থনে জনমত গঠন করতে পারেন। এ জনমত গঠনের মাধ্যমে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে প্রভাবিত করেন।

৭. রাষ্ট্রপতির লবি: মার্কিন রাষ্ট্রপতি তাঁর লবির মাধ্যমেও কংগ্রেসের উপর তার প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কর্মচারীগণই হলেন রাষ্ট্রপতির লবি। শাসন বিভাগের বিভিন্ন শাখা ও বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীগণ রাষ্ট্রপতির অধীনে কাজ করেন। ফলে রাষ্ট্রপতি তাঁর লবির মাধ্যমে কংগ্রেসের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৮. শাসন সংক্রান্ত: শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা মার্কিন সংবিধান রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করেছে। তবে রাষ্ট্রপতির এ শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার উপর বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ক্যাবিনেট সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বাষ্ট্রদূত প্রভৃতি উচ্চপদস্থ সরকারি পদে নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সিনেটের পরামর্শ ও সম্মতি নিতে হয়।

৯. বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ: কংগ্রেসের সাথে বৈদেশিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রপতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিদেশের সাথে নির্বাহী চুক্তি সম্পাদনে মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে সিনেটের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে অন্যান্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সিনেটের সম্মতির প্রয়োজন হয়।

রাষ্ট্রপতির উপর কংগ্রেসের প্রভাব: রাষ্ট্রপতির উপর কংগ্রেসের প্রভাব বিস্তারের কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:

১. ব্যয় বরাদ্দের দাবি মঞ্জুর: যদিও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ব্যয় বরাদ্দ করেন, তথাপি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া তাঁর পক্ষে সে নীতি কার্যকর করা সম্ভব নয়।

২. ভেটো বাতিল: কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি ভেটোকে বাতিল করতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিক্সসনের ভেটোকে বাতিল করে কংগ্রেস ‘War Power Act’ প্রণয়ন করেন। রাষ্ট্রপতির ভেটোকে বাতিল করে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

৩. সন্ধি বা চুক্তিপত্র অনুমোদন: মার্কিন রাষ্ট্রপতি কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করলে তাতেও সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সিনেট অনুমোদন না করলে এগুলো কার্যকর হয় না।

৪. রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্ট: মার্কিন কংগ্রেস ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেন। সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য কর্তৃক অনুমোদন লাভ করলে রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা হয়।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কিন শাসনব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের ব্যবস্থা থাকায় এদের মাঝে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেসের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কখনই এক হয় না। কংগ্রেস প্রায় সময়ই রাষ্ট্রপতির প্রতিযোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এতদসত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেস অনেক ক্ষেত্রেই সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্রব্যবস্থার সাফল্যকে সুনিশ্চিত করেছে।