অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির শুরুত্ব উল্লেখ কর। অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রভাব উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অতি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি। ক্ষমতা যদি একই বিভাগের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে তবে অন্যান্য বিভাগের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। আবার ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষিত না হলে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। মূলত জনগণের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানে এ নীতির উদ্ভব ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নিীতির গুরুত্ব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব অত্যধিক। নিম্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব আলোচনা করা হল।
১. ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: মার্কিন শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তি বা বিভাগের হাতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির
মাধ্যমে ক্ষমতা পৃথক করে দেয়া হয়েছে। ফলে তারা তাদের কার্যাবলি স্বাধীনভাবে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পাবে। সুতরাং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।
২. বিচার বিবাগীও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরা: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে। ফলে বিচার বিভাগের কার্যাবলির ক্ষেত্রে শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে বিচার বিভাগ সঠিকভাবে তাদের কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে। সুতরাং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে।
৩. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে বিচার বিভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। এতে শাসন বিভাগের অযৌক্তিক নীতিকে বাধা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে মার্কিন জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে।
৪. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের প্রত্যেক বিভাগ তাদের দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। এর ফলে প্রত্যেক বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মার্কিন সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. আইন বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে আইন বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। ফলে সুষ্ঠুভাবে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুষ্ঠুভাবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ; ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে প্রত্যেক বিভাগ তাদের স্ব-স্ব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে না এবং এতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যযে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
৭. সুশাসন নিশ্চিতকরণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে প্রত্যেক বিভাগ স্ব-স্ব কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। কেননা এক বিভাগ অন্য বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সরকারের সকল বিভাগের হাতে ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করে দেয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষিত হয়েছে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কতিপয় সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা কার্যকরী। তবে একথা সত্য যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বর্তমানে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কেননা এটি গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিরোধী। সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বলা যায়, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বাধীনতা রক্ষা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।