উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : বিশ্বাস হারানোকে পাপ আখ্যায়িত করে নতুন স্বপ্ন দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রবন্ধকার উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর যে ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে বাড়ির মানুষগুলো ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথও শিশুকাল থেে নিজের শিক্ষা ও জ্ঞানকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আলোকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তখন ইংরেজি ভাষার মধ্য দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা ও উপভোগ করা ছিল মার্জিতমনা বৈদগ্ধ্যের পরিচয়। ইংরেজদের সভ্যশাসনকে ভারতীয়রা আশীর্বাদ বলে গ্রহণ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ অল্প বয়সে বিলেতে গিয়ে ইংরেজ চরিত্রের যে মহত্ত্বের পরিচয় পেয়েছিলেন তাতে তিনি ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের তথাকথিত সভ্যশাসনের অন্তরালে যে সাম্রাজ্যবাদী কদর্যতার পরিচয় পেলেন তাতে তাঁর সব বিশ্বাস দেউলিয়া হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য ভারতের বুক থেকে নবশক্তির আবির্ভাব কামনা করলেন। নিজেদের উপর থেকে বিশ্বাস হারানোকে তিনি পাপ বলে মনে করতেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করলেন যে, মহাপ্রলয়ের পর বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ অবশ্যই আরম্ভ হবে এ পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন পরাজিত ভারতীয়রা নিজেদের জয়যাত্রার অভিযানে সব বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহত্মর্যাদা ফিরে পাবার জন্য।
মন্তব্য : মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস হারানো পাপ। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়া সম্ভব।