অথবা, মানব সমাজ ও পরিবেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত নিয়ামকসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পরিবেশ ও মানব সমাজের সাথে সম্পৃক্ত উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা : প্রতিবেশ এর আলোচ্যবিষয় মানুষ, প্রাণিকূল ও তার চারপাশের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক। এক্ষেত্রে মানুষের পরিবেশের মধ্যে তার চারদিকের সমস্ত পারিপার্শ্বিক দিক জড়িত।
পরিবেশ প্রধানত ২ প্রকার : প্রাকৃতিক ও সামাজিক। সমাজকর্মী যেহেতু মানুষের কল্যাণে কাজ করে, সেহেতু তাকে মানুষের সমস্যার সমাধান করে কল্যাণসাধন করতে হলে অবশ্যই মানুষের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে জানতে হবে। আর এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে প্রতিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কেননা প্রতিবেশ এমন কতকগুলো উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করে সেগুলো মানব সমাজ ও পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত।
মানব সমাজ ও পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত উপাদানসমূহ : প্রতিবেশের মূল আলোচ্যবিষয় হলো মানবসমাজ এবং তার পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক এবং ভারসাম্য নিয়ে ব্যাখ্যা করা। তাছাড়া যেসব বিষয়সমূহ মানবসমাজ
এবং পরিবেশের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সে সম্পর্কিত জ্ঞানও থাকা আবশ্যক। ৪টি উপাদান (factor) মানবসমাজ এবং
পরিবেশের সাথে খুবই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. জনসংখ্যা : দেশের জনসংখ্যা, তাদের জীবনযাত্রা প্রণালি, দক্ষতা প্রভৃতি সম্পর্কে সমাজকর্মীর জ্ঞান থাকা দরকার। কেননা, যদি দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকে, তবে অশিক্ষা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, অপুষ্টি প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর এ ধারণা থেকে সমাজকর্মী জ্ঞান লাভ করে যে, অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের জন্য ক্ষতিকর এবং জনসংখ্যা হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. প্রতিষ্ঠান : জনসমষ্টির প্রকৃতি, প্রতিষ্ঠানসমূহ, কার্যপ্রণালি যদি পরিবেশের জন্য পরিপন্থী হয় তাহলে সমাজকর্মীকে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতির সাহায্যে প্রতিষ্ঠানসমূহ তথা Local Community তে সচেতন করে তাদের পরিবেশের ক্ষতিমূলক কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।
৩. পরিবেশ : দেশে যদি যথেষ্ট সম্পদ থাকে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না থাকে তবে সমস্যার তেমন প্রকটতা থাকে না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি থাকলে পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মানুষের সুষ্ঠু স্বাভাবিক জীবনের পথে হুমকিস্বরূপ। তাই এ সম্পর্কে সমাজকর্মীকে জানতে হয়।
৪. প্রযুক্তি : পরিবেশ দূষণ এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টির পিছনে এটাই অনেকাংশে দায়ী। মানবসমাজ বিভিন্ন প্রকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যস্ত। কিন্তু এর ফলে যে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, সে সম্পর্কে জনগণই উদাসীন যা যথার্থ উন্নয়নের পরিপন্থী। তাই সমাজকর্মীকে এ বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিবেশের উপাদানসমূহ মানব সমাজ ও পরিবেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। এগুলোর নানারকম প্রভাব উভয়ের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তবে উন্নতির চেয়ে অবনতির চিত্রটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। এভাবে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বিভিন্ন প্রকার প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, নতুন নতুন প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের পরিবেশ দূষণ করছে এবং এর ফলে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তার উপযুক্ত সাধারণের জন্য প্রতিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।