মানবজীবনে সংস্কৃতির প্রভাব কতটুকু বলে তুমি মনে কর আলোচনা কর?

অথবা, মানবজীবনে সংস্কৃতির ভূমিকা আছে কী? থাকলে আলোচনা কর।
অথবা, মানুষ তার পারিপার্শ্বিক সংস্কৃতি ছাড়া চলতে পারে না। কথাটি কতটুকু সত্য আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
সংস্কৃতি মানবজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত উপজাতি বেশি। সামাজিক জীবনে সাংস্কৃতিকে ধারণ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। পৃথিবীর যে কোন জাতি, সম্প্রদায়, সবার একটা স্বতন্ত্র সংস্কৃতি রয়েছে। সে আদিম গুহাবাসী থেকে শুরু করে বর্তমানের আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্ন সংস্কৃতিকে ধারণ করে এসেছে।
সে গত গোষ্ঠীগত জীবনে সংস্কৃতির ভূমিকা : নিম্নে গোষ্ঠীগত জীবনে সংস্কৃতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. আমরা বোধের সৃষ্টি করে : যে কোন গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি এক আমরা বোধ (We feeling) এর সৃষ্টি করে। গোষ্ঠীর সদস্যদের সবাইকে সংস্কৃতি প্রেম-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। সুস্থ গোষ্ঠীজীবনের স্বার্থে গোষ্ঠীর সদস্যবর্গের মধ্যে, পারস্পরিক সহযোগিতার এক পরিমণ্ডল অপরিহার্য প্রতিপন্ন হয়। সংস্কৃতির মাধ্যমে এ ধরনের পরিমণ্ডল সৃষ্টির উপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে। সাংস্কৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত ও উদার হয়। তার ফলে ব্যক্তি মানুষ নিজেকে গোষ্ঠীর অন্যতম অংশ হিসেবে মনে করে। বিদ্যাভূষণ ও সচদেব এর ভাষায় : “It (culture) provides him with the concepts of family state, nation & class & makes possible the coordination & division of labour. It creates in his esprit de corps.
২. সামাজিক সংহতি সংরক্ষণ : সংস্কৃতি হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শক্তি। সমাজের সংহতি ও শৃঙ্খলা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এ শক্তির অনন্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। পৃথিবীর যে কোন দেশের সমাজব্যবস্থায় সংস্কৃতির এ ভূমিকার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিরোধ বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এভাবে গোষ্ঠীজীবনের অস্তিত্ব অব্যাহত থাকে। সামাজিক সম্পর্ককে সংস্কৃতি
সঠিকভাবে পরিচালিত করে। তার ফলে গোষ্ঠীজীবনের বন্ধন অটুট থাকে। এভাবে সংস্কৃতির ভিত্তিতেই গোষ্ঠীর সংহতি অটুট থাকে। সুতরাং এ ব্যাপারে সংস্কৃতির কাছে গোষ্ঠীজীবনের ঋণ অস্বীকার করা যায় না।
৩. জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি : সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি জ্ঞানার্জনের আগ্রহ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে। সমাজবদ্ধ মানুষের এ আগ্রহ নিরসনের ক্ষেত্রেও সংস্কৃতি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বস্তুত গোষ্ঠীর সদস্যবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি চিন্তাচেতনা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিপ্রেত অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি করে। গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি ন্যায়নীতিবোধ, ধর্মবোধ, সৌন্দর্যবোধ প্রভৃতিকে উজ্জীবিত করে। স্বভাবতই সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যদি গুরুত্বপূর্ণ কোন পরিবর্তন ঘটে তা হলে তার প্রভাব প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিজীবন ও গোষ্ঠীজীবনের উপর অনিবার্যভাবে অনুভূত হয়।
৪. সুস্থ গোষ্ঠীজীবন সম্ভব করে : সংস্কৃতি হলো সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের ধারক ও বাহক। গোষ্ঠীজীবনে ব্যক্তি মানুষের আচারব্যবহারকে সংস্কৃতি যুক্তিসংগত ও দায়িত্বশীল করে তোলে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতির অবদান অনস্বীকার্য। সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সমাজজীবনে টমাস হবস কল্পিত ভয়াবহ প্রাকৃতিক অবস্থায় পরিণত হওয়ার আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রতিটি দিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এজন্য পরিবেশ অনুসারে প্রত্যেক সমাজে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠে। পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনোভাব রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ও গোষ্ঠীগতভাবে মানুষের যে প্রচেষ্টা তা থেকে সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তাই আমরা বলতে পারি, মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে সমাজজীবনের অন্যান্য উপাদানের ন্যায় সংস্কৃতিও বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4-%e0%a6%ac/