অথবা, চিত্রের সাহায্যে মাত্রাগত উৎপাদন বিধিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সম-উৎপাদন রেখার মাধ্যমে মাত্রাগত উৎপাদন প্রবাহ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সম-উৎপাদন রেখার সাহায্যে মাত্রাগত উৎপাদন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রারম্ভিক কথাও উৎপাদনের সকল উপকরণ একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিবর্তন করলে মোট উৎপাদনের পরিমাণে যে পরিবর্তন দেখা দেয় তাকে মাত্রাগত উৎপাদন বলে। মাত্রাগত উৎপাদন-এর ধারণাটি দীর্ঘ মেয়াদের সথে সম্পর্কিত। কারণ দীর্ঘকালে সকল উপকরণ পরিবর্তনীয়। সুতরাং দীর্ঘকালে সকল উপকরণে সমানুপাতিক বৃদ্ধির দরুণ উৎপাদনের পরিমাণে যে পরিবর্তন আসে তাকেই ‘মাত্রাগত উৎপাদন’ বলে। মাত্রাগত উৎপাদন বা উৎপাদন বিধি তিন
ধরনের হয়ে থাকে। মাত্রাগত উৎপাদন বিধিসমূহঃ নিম্নে মাত্রাগত উৎপাদন বিধিসমূহ ব্যাখ্যা করা হল-
১. ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদনঃ উপাদানের মাত্রা যে হারে বাড়ে উৎপাদন তার চেয়ে অধিক হারে বৃদ্ধি পেলে তাকে ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। এর অর্থ হল দ্বিগুণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উপাদানের মাত্রা দ্বিগুণের চেয়ে কম বাড়তে হয়। এ অবস্থায় সমউৎপাদন রেখার দুরত্ব ক্রমশ কমে আসে। নিম্নে বিষয়টি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল-
চিত্রে ১ ও ৮ বিন্দুতে অতিরিক্ত ১০ একক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ১ একক শ্রম ও মূলধন ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ৮ থেকে বিন্দুতে অতিরিক্ত ১০ একক উৎপাদনের জন্য ০.৫ একক শ্রম ও মূলধন ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সমপরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পূর্বের চেয়ে কম শ্রম ও মূলধন ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই মাত্রাগত উৎপাদন এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান। আরও লক্ষণীয় ab > bc অর্থাৎ সম উৎপাদন রেখার দূরত্ব কমছে। ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদনের বেলায় সম উৎপাদন রেখা সমূষের দূরত্ব কমে আসে।
২. ছির মাত্রাগত উৎপাদনঃ উপাদানের মাত্রা যে হারে বাড়ে উৎপাদন সে হারে বাড়লে তাকে স্থির মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। এক্ষেত্রে দ্বিগুণ উৎপাদনের জন্য উপাদানের মাত্রা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এমতাবস্থায় সম উৎপাদন রেখাসমূহ সমদূরত্বে অবস্থান করে। চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি দেখানো হল-
চিত্রে এ ও ৮ বিন্দুতে অতিরিক্ত ১০ একক উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ১ একক শ্রম ও মূলধন ব্যবহৃত হয়। আবার, ৮ থেকে : বিন্দুতে অতিরিক্ত ১০ একক উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ১ একক শ্রম ও মূলধন ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সমপরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পূর্বের সমান উপকরণ বৃদ্ধি করতে হয়। চিত্রানুসারে ab = bc অর্থ্যৎ সম উৎপাদন রেখাসমূহ সমদূরত্বে অবস্থান করে। তাই মাত্রাগত উৎপাদন এক্ষেত্রে স্থির থাকে।
৩. ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদনঃ উপাদানের মাত্রা যে অনুপাতে বাড়ে উৎপাদন তার চেয়ে কম হারে বাড়লে তাকে ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। এর অর্থ এই যে, সমপরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পূর্বের চেয়ে বেশি উপকরণ নিয়োগ করতে হয়। এর ফলে সমউৎপাদন রেখাসমূহের দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। চিত্রের মাধ্যমে তা দেখানো হল-
চিত্রে এ থেকে ৮ বিন্দু অতিরিক্ত ১০ একক উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ১ শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করতে হয়। কিন্তু ৮ থেকে: বিন্দুতে আরও অতিরিক্ত ১০ একক উৎপাদনের জন্য শ্রম ও মূলধন ২ একক করে বৃদ্ধি করতে হয়। অর্থাৎ সমপরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পূর্বের চেয়ে অধিক শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করতে হয়। তাই মাত্রাগত উৎপাদন এক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান। আরও লক্ষণীয়, চিত্রে ab < bc অর্থাৎ ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদনের বেলায় সম-উৎপাদন রেখার দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এভাবে সম-উৎপাদন রেখা ও সমখরচ রেখার সাহায্যে মাত্রাগত উৎপাদন ধারণাটি ব্যাখ্যা করা যায়।
উপসংহারঃ উপরোক্ত আলোচনার পরিশেষে আমরা বলতে পারি উৎপাদনের উপকরনের পরিবর্তনের ফলে মোট উৎপাদন যে হারে পরিবর্তিত হয় সেই হারকে মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়। উৎপাদনের পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে সেটি কোন ধরনের মাত্রাগত উৎপাদন।