অথবা, সমাজকর্মে মাঠকর্ম অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের তাৎপর্য আলোচনা কর।
অথবা, সমাজকর্মে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : একটি প্রায়োগিক বিষয় হিসেবে সমাজকর্মে মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অত্যধিক।সমাজকর্মের জ্ঞান দক্ষতা ও কলাকৌশলকে বাস্তবে প্রয়োগের দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনের উপায় হলো মাঠকর্ম। সমাজকর্মের তাত্ত্বিক “জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করা এবং তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় কেবল মাঠকর্ম অনুশীলনের মাধ্যমেই সম্ভব।
মাঠকর্মের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা : নিম্নে সমাজকর্মের মাঠকর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:
১. যোগ্য ও দক্ষ সমাজকর্মী তৈরি : সমাজকর্মের লক্ষ্যার্জনের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী।মাঠকর্ম শিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও কুশলী সমাজকর্মী সৃষ্টি হয়। তাই পেশাদার সমাজকর্মী তৈরির শিক্ষণ শিক্ষার্থীরা মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। ফলে তারা শিক্ষণ থেকেই নিজেদের সমাজকর্মী হিসেবে ভাবতে শিখে।
২. প্রতিবেদন তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন : করানো ধরনের প্রশিক্ষণ বা গবেষণা শেষে এর উপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয়। সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা যারা প্রশিক্ষণ শেষে তার কাজের উপর এটি প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।তাই বলা যায়, শিক্ষার্থী মাত্রই প্রতিবেদন তৈদর দক্ষতা অর্জন মাঠকর্ম শিক্ষণের মাধ্যমে পেয়ে থাকে ।
৩. সার্বিক কল্যাণ : সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য হলো মানবকল্যাণ তথা সমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা । এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তারা সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন শেষে বাস্তবে প্রয়োগ করে। মাঠকর্ম শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার সুযোগ পায় ।
৪. দক্ষতা ও নৈপুণ্যতা অর্জন : পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা লাভ এবং নিজেকে সুশৃঙ্খল কর্মে নিয়োগ করার অভিজ্ঞতা অর্জন কেবল মাঠকর্মে শিক্ষণের মাধ্যমে সম্ভব । এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের লব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতাকে সহজে বাস্তবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় ।
৫. জ্ঞানের পূর্ণতা লাভ : সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পূর্ণতা আনয়ন করে মাঠকর্ম । শিক্ষার্থীরা তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে মাঠকর্মের শিক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে থাকে । এ ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়িয়ে দেয়।
৬. অনুপ্রেরণা ও কর্মসস্পৃহা : মাঠকর্ম শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের বাস্তবে পেশাগত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য অনুপ্রেরণা দান করে । এ জাতীয় শিক্ষণ তাদের কর্মসস্পৃহা বৃদ্ধি করে। তাই শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও কর্মসস্পৃহা বাড়াতে মাঠকর্ম শিক্ষণ অত্যাবশ্যক ।
৭. মানব আচরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন : ষের আচারআচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ প্রভৃতি সম্পর্কে সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন । মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষার্থীরা মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পায় । ফলে তারা মানব আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করে থাকে ।
৮. সমাজকর্মের পদ্ধতি ও কৌশল আয়ত্তকরণ : ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম পদ্ধতির জ্ঞান অত্যাবশ্যক । সমাজকর্মের পদ্ধতি ও কৌশলকে বাস্তবে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জনের প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় মাঠকর্মের মাধ্যমে। এজন্যই শিক্ষার্থীদের জন্য মাঠকর্ম অনুশীলন খুবই জরুরি ।
৯. বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পরিচয় : মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের
বিভিন্ন এজেন্সিতে প্রেরণ করা হয়। তারা তাদের নিজস্ব সংস্থা সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করে এবং প্রতিবেদনে এজেন্সির পরিচয় তুলে ধরে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করার সুযোগ লাভ করে ।
১০. তথ্যসংগ্রহ : মাঠকর্মের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা সমষ্টি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংগ্রহ করা যায় ও সেগুলোকে কাজে লাগানো যায় ।
১১. সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত জ্ঞান : মাঠকর্মের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংগ্রহ করা যায় ও সেগুলোকে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বাস্তবে কাজে লাগানো যায়।
১২. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ : মাঠকর্মের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ করা সম্ভব হয় এবং সেসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারের নিকট একটি যুগোপযোগী সুপারিশ প্রদান করা যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মের মাঠকর্ম শিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অত্যধিক । বিশেষ করে সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য এর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার্থীরা সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার দক্ষতা অর্জন করে মাঠকর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে। এজন্যই সমাজকর্মে মাঠকর্মকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয় ।