মহাবীরকে জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন?

অথবা, বর্ধমানকে জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন?
অথবা, জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে যে কয়েকটি দার্শনিক সম্প্রদায় রয়েছে তার মধ্যে একটি অন্যতম সম্প্রদায় হলো জৈন সম্প্রদায়। জৈন দার্শনিকগণ দর্শনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। জৈন দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন। জৈনদের দর্শন ছিল বিশুদ্ধ বাস্তববাদী দর্শন। তারা বিশ্বজগতের একটি পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছেন। বিশ্বজগতের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সত্তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
জৈন তীর্থঙ্কর : ‘জৈন দর্শন খুবই প্রাচীন। যজুর্বেদে ঋষভ, অজিতনাথ এবং অরিস্টনেমি নামে তিনজন তীর্থঙ্করের।উল্লেখ এই প্রাচীনতা সূচিত করে। চব্বিশজন তীর্থঙ্কর এই ধর্মের প্রচারক। এদের সর্বপ্রথম তীর্থঙ্কর হলেন ঋষভদেব এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্কর হলেন বর্ধমান। বর্ধমানের অপর নাম মহাবীর।
বর্ধমানের পরিচয় : জৈন দর্শনের প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা এবং শেষ জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীর বৈশালী নগরে এক ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই স্থানটি বর্তমান পাটনার অনতিদূরে অবস্থিত ছিল। তাঁর পিতার নাম সিদ্ধার্থ এবং মাতার নাম ছিল ত্রিশলা। তিনি গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন।
বর্ধমানের কৈবল্য লাভ: বর্ধমানের বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন তিনি তাঁর ভাই নন্দীবর্ধনের অনুমতি গ্রহণ করে সন্ন্যাসজীবন বরণ করেন। বারো বছর কঠোর তপস্যার পর তিনি কৈবল্য লাভ করেন। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি আরও বিয়াল্লিশ বছর জীবিত ছিলেন এবং গৌতম বুদ্ধের কিছুকাল পূর্বে তিনি পরলোকগমন করেন।
বর্ধমান জৈন তীর্থঙ্কর ছিলেন : তীর্থঙ্কর শব্দের অর্থ যিনি মানুষকে নতুন পথ দেখান। জৈনরা তীর্থঙ্করদের জীন নামেও অভিহিত করেন। ‘জি’ ধাতুর অর্থ জয় করা। এ অর্থে মহাবীরকে জয়ী বলা হয়। তিনি ছিলেন জিন অর্থাৎ তিনি ষড়রিপু জয় করেছিলেন। জৈনদের মতে, এই তীর্থঙ্কর সাধনার বলে রাগ, দ্বেষ, কামনা, বাসনা জয় করে মোক্ষলাভ করেছিলেন।
জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা : জৈন ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে যেসব গ্রন্থ আমরা পাই সেসব গ্রন্থে জৈন ধর্ম ও দর্শনের যেসব উপদেশ ও বাণী আছে যা জৈন দর্শনের মূলমন্ত্র সেসব বাণী ও উপদেশ মহাবীরের অবদান বলে মনে করা হয়। কৈবল্য লাভের পর তিনি এসব বাণী ও উপদেশ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। জনশ্রুতি আছে যে, চব্বিশ জন তীর্থঙ্কর জৈন
দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেও মহাবীর বাদে অন্যদের উপদেশ ও বাণী তেমন সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায় না। তাই মহাবীরকেই জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রচারক হিসেবে চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের পরিচয় পাওয়া গেলেও জৈন ধর্ম ও দর্শনকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আমার যে কৃতিত্ব সে কৃতিত্বের দাবিদার একজনই । আর তিনি হলেন মহাবীর। এজন্য মহাবীরকেই জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।