মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তাৎপর্য লিখ।
অথবা, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব লিখ।
অথবা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
(ডি-৬ পত্র) –
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা ইতিহাসে বিরল। সুসংগঠিত পাকবাহিনীর সাথে অসম সংগ্রামে বাংলার দামাল ছেলেরা শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় এবং বহু বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে অবশেষে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য পুষ্ট হয়ে বাংলাদেশকে পশু শক্তির কবল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তাৎপর্য : মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রাচীন যুগ থেকে এ জনপদে বাঙালির একটি স্থায়ী আবাসভূমি গড়ে তোলার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। এর জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষদেরও
অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তিতুমীর, হাজী শরিয়তউল্লাহ, ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা প্রমুখ সংগ্রামী বীর বাঙালি বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। সর্বশেষ পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন শোষণের ফলে জাতীয়তাবাদের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র জাতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, নারী, পুরুষ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও স্তরের কোটি কোটি মানুষ এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি শৌর্য-বীর্যের সর্বোচ্চ প্রমাণ রেখেছিল। স্বাধীনতা ও দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ, ধনসম্পদ ও সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার এক নজিরবিহীন স্বাক্ষর রেখেছিল বাঙালিসহ বিভিন্ন
উপজাতীয় জনগোষ্ঠীও। পাকিস্তানি সৈন্যদের সকল অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করে আমাদের জনসাধারণ দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একটি সুখী সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছেন, কোটি কোটি মানুষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদেরকে পৃথিবীর বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।