অথবা, ইবনে সিনা কিভাবে দেহ ও আত্মার ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন?
অথবা, সংক্ষেপে ইবনে সিনার মনোবিদ্যা সম্পর্কিত আলোচনা তুলে ধর।
অথবা, ইবনে সিনার মনোবিদ্যা সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, ইবনে সিনার মনোবিদ্যা কিরূপ?
উত্তর৷ ভূমিকা : ইবনে সিনা অন্যতম একজন মুসলিম দার্শনিক। দর্শনের পাশাপাশি তিনি চিকিৎপাশাস্ত্র ও জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় দেন। তিনি তার জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তাশক্তির প্রখরতা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সুপরিচিত। তিনি দেহ ও মনের সম্পর্ক নির্ধারণ করতে গিয়ে মনোবিদ্যাকে আলোচনা করেন। তাঁর মতামত চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। মনোবিদ্যায় ইবনে সিনার অবদান : ইবনে সিনা একজন প্রভাবশালী চিকিৎসাবিজ্ঞানী। তিনি বিভিন্ন গ্রন্থে দৈহিক গঠন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন দৈহিক দিক দিয়ে মানুষকে সার্বিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ দেহের বাইরে মানুষের আলাদা একটি বৃত্তি রয়েছে। এ বৃত্তিকেই বলা হয় আত্মা। তিনি মানুষের মাঝে এ দুটি বৃত্তি রয়েছে বলে মনে করেন এবং দ্বৈতবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করেন। এ দিক থেকে তিনি ডেকার্টের পূর্ববর্তী। আধুনিক দার্শনিক ডেকার্ট তাঁর এ ধারণাই পুনরাবৃত্তি করেছেন। ইবনে সিনা মনে করেন আত্মা হলো দেহ থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র সত্তা। মানবদেহ আকস্মিকভাবে আত্মা সংযুক্ত হয়েছে, আর তাই তা দেহ হতে বিচ্ছেদ্য। প্রতিটি আত্মার মূল উৎস হলে বিশ্ব আত্মা। বিশ্ব আত্মা থেকেই সকল আত্মা এসেছে। আত্মা একটি বিশেষ দ্রব্য। দৈহিক শৃঙ্খলে অবস্থানকালে আত্মার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। ইবনে সিনা আত্মাকে তিন ভাগে ভাগ করেন। যথা :
১. উদ্ভিদ আত্মা : উদ্ভিদ আত্মার ৩টি বৃত্তি রয়েছে বর্ধন শক্তি, বিকাশ শক্তি ও পুনরুৎপাদন শক্তি।
২. জীব আত্মা বা জীবাত্মা : জীবাত্মার দুটি বৃত্তি রয়েছে প্রথমত, সঞ্চালন শক্তি, ক্ষুন্নিবৃত্তি ক্ষুন্নিবৃত্তি ও ক্রিয়াকর্ম দ্বিতীয়ত, প্রত্যক্ষণ শক্তি। প্রত্যক্ষণ শক্তির দুটি দিক রয়েছে বহিঃইন্দ্রিয় ও আত্মঃইন্দ্রিয়। বহিঃইন্দ্রিয়সমূহ হলো দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ, স্বাদ, ঘ্রাণ এবং আন্তঃইন্দ্রিয়সমূহ হলো বুদ্ধি, কল্পনা, চিন্তাশক্তি, স্মৃতি প্রভৃতি।
৩. মানবাত্মা : ইবনে সিনার মতে মানবাত্মার দুটি দিক রয়েছে প্রথমত, বিশুদ্ধ বুদ্ধি, দ্বিতীয়ত, ব্যবহারিক বুদ্ধি। প্রথমটি মূর্ত চিন্তা করে আর পরেরটি দৈহিক মানদণ্ড সম্পর্কে আলোচনা করে। ইবনে সিনার মতে, একমাত্র মানবাত্মাই উচ্চতর বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার অধিকারী। এদিক থেকে কান্টের মতের সাথে তার সাদৃশ্য রয়েছে। তাছাড়া মানবাত্মার রয়েছে উন্নত অনুধ্যান ক্ষমতা ও বিচারবিশ্লেষণ ক্ষমতা। এজন্যই সে অবধারণ গঠন করতে পারে, আর তাই মানবাত্মাকে প্রাজ্ঞিক আত্মা বলা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, ইবনে সিনা তার মনোবিদ্যায় দ্বৈতবাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন যেখানে আত্মা ও দেহের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিক থেকে তিনি ডেকার্ট ও কান্টের বহু পূর্বে আত্মা ও বুদ্ধির ধারণা সম্পর্কে মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করেন। তাঁর মনোবিদ্যক আলোচনা মুসলিম
দর্শনকে সমৃদ্ধি দান করেছে।