মনোবিজ্ঞানের মনোবিজ্ঞানের যা জান লিখ। সংজ্ঞা শাখাপ্রশাখাগুলো দাও। সম্পর্কে
অথবা, মনোবিজ্ঞান কী? মনোবিজ্ঞানের কী কী ক্ষেত্র রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা : মনোবিজ্ঞান হলো আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান। আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া নিয়েই মানবজীবন। মানুষকে জানতে হলে তার আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হবে। আর মানুষের আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ বুঝতে হলে মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। ঘুম থেকে জেগেই শুরু হয় বিভিন্ন আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ। নিদ্রা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা চলতে থাকে। জাগ্রত ও নিদ্রিত উভয় অবস্থায়ই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে। তাই যেখানেই আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ, সেখানে রয়েছে মনোবিজ্ঞানের অস্তিত্ব।ক্রাইডার ও অন্যান্যরা বলেছেন, “আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞানসম্মত অনুধ্যান হিসেবে মনোবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।” মনোবিজ্ঞানী Woodworth এর মতে, “মনোবিজ্ঞান হলো পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান।” মনোবিজ্ঞানী জেমস মনোবিজ্ঞানকে, “মানুষের কার্যাবলি ও মানসিক ক্রিয়াসমূহের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন।” গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে, “মনোবিজ্ঞান হলো আত্মা সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান ৷” অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউম বলেছেন, “মনোবিজ্ঞান হলো মানসিক প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান “মনোবিজ্ঞান মানসিক মনোবিজ্ঞানী ওয়াটসন বলেছেন, “মনোবিজ্ঞান হলো: মানুষের আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান।” মনোবিজ্ঞানী স্টাউট বলেছেন, অবস্থা ও প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান ।” মনোবিজ্ঞানী ম্যাকডুগাল বলেছেন, “মনোবিজ্ঞান হলো জীবের আচরণ সম্বন্ধীয় বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান।” মনোবিজ্ঞানী নাইট এবং নাইট বলেছেন, মনোবিজ্ঞান অভিজ্ঞতা এবং আচরণের সুসংগত আলোচনা : মানুষ এবং প্রাণীর, স্বাভাবিক এবং অস্বভাবী, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ।” উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে সংজ্ঞাটি এভাবে প্রদান করা যেতে পারে যে, মনোবিজ্ঞান হলো মানুষ ও প্রাণীর আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানসম্মত অনুধ্যান।
মনোবিজ্ঞানের শাখাপ্রশাখা : আত্মা সম্পর্কীয় ধারণা নিয়ে মনোবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মনোবিজ্ঞান একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করেছে। সময়ের পরিবর্তন এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে উন্মেচিত হয়েছে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক, প্রসারিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্র। শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, ইঞ্জিনিয়ারিং, যুদ্ধ, দেশরক্ষা, চিকিৎসা, শিশুপালন, অপরাধ তত্ত্ব প্রভৃতি ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের একচ্ছত্র আধিপত্য অব্যাহত রয়েছে। এভাবে জীবন পরিবেশের বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উদ্ভব হয়েছে। ক্ষেত্র বিষয়ের বিভিন্নতা অনুযায়ী মনোবিজ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে। নিম্নে’ মনোবিজ্ঞানের প্রধান শাখাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সাধারণ মনোবিজ্ঞান : মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়সমূহ মূলত সাধারণ মনোবিজ্ঞানের মূল উপজীব্য বিষয়। সাধারণ মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যা আলোচনা করে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করে। তাই সাধারণ মনোবিজ্ঞানের সকল শাখার সম্মিলিত রূপ বা কেন্দ্রীয় সমন্বয় কেন্দ্র বলা যেতে পারে। আচরণ ও মানসিক কার্যাবলি সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলো, যেমন- প্রেষণা, শিক্ষণ, স্মৃতি বিস্মৃতি, প্রত্যক্ষণ, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব, চিন্তন, আবেগ প্রভৃতি সাধারণ মনোবিজ্ঞানের অন্ত গর্ত। মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিসমূহ ও তাদের উপযোগিতা, বিজ্ঞান হিসেবে মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক মূল্যায়ন, আচরণের জৈবিক ভিত্তি প্রভৃতিও সাধারণ মনোি মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যসূচির আওতাভুক্ত। মোটকথা, মনোবিজ্ঞানের সকল শাখার সাধারণ বিষয়গুলোর প্রাথমিক আলোচনা নিয়েই সাধারণ মনোবিজ্ঞান গঠিত।
২. পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান : পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। মনোবিজ্ঞানের এ শাখায় পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে উপাত্ত সংগ্রহ করে তার ব্যাখ্যা ও ন বিশ্লেষণ করা হয়। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে সুব্যবস্থিত ও সুপরিকল্পিত অবস্থায় সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষণ পাত্রের উপর উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবের আচরণের মৌলিক কারণ খুঁজে বের করা হয়। আচরণ সম্পর্কিত প্রায় সকল তত্ত্বই পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ।
৩. ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞান : মানসিক রোগের চিকিৎসার ইতিহাস বেশ পুরাতন। প্রাচীনকালে মানসিক রোগীকে স্বাভাবিক মানুষ থেকে আলাদাভাবে দেখা হতো। মনে করা হতো তাদের উপর ডাইনি বা অশরীরী শক্তি বা অপদেবতা ভর করেছে। বর্তমানে ঐসব প্রাচীন ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। অস্বাভাবিক আচরণের গতিপ্রকৃতি ও তার ব্যাখ্যা, মানসিক রোগের লক্ষণ, কারণ ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি প্রভৃতি চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয়। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী প্রথমে রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করে তার কারণ অনুসন্ধান করতে সচেষ্ট হন। তারপর রোগীর যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন অভীক্ষা প্রয়োগ করে থাকেন। রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীগণ গ্রহণ করে থাকেন।
৪. শিক্ষা মনোবিজ্ঞান : শিক্ষা মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। মনোবিজ্ঞানের এ শাখায় মানুষের শিক্ষা সম্পর্কিত আচরণের বিভিন্ন সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয় এবং এগুলোর সমাধানে মনোবিজ্ঞানের মূলনীতিসমূহ কিভাবে প্রয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত মানুষের সব ধরনের আচরণই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
৫. শিল্প মনোবিজ্ঞান : মনোবিজ্ঞানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলিত শাখা হলো শিল্প মনোবিজ্ঞান। শিল্পকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে শিল্প মনোবিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটেছে। শিল্পকারখানায় শ্রমিক নিয়োগ, কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী উপযুক্ত লোক নির্বাচন, তাদের প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি ও মূল্যায়ন প্রভৃতি শিল্প মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে কর্মচারীদের দক্ষতা, মনোবল ও কর্মসন্তুষ্টি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাই কর্মচারীর দক্ষতা ও মনোবল বৃদ্ধি এবং কর্মে সন্তুষ্টি বিধান শিল্প মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য।
৬. বিকাশ মনোবিজ্ঞান : বিকাশ মনোবিজ্ঞান হলো মনোবিজ্ঞানের সে শাখা, যেখানে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সেসব পরিবর্তনের পার্থক্য লক্ষ করা যায়। মনোবিজ্ঞানের এ শাখা শুধু বয়স অনুযায়ী আচরণের বিবরণ প্রদান করে তা নয়, এটি বিভিন্ন বয়সে ব্যক্তি ভেদে আচরণে যে পার্থক্য দেখা দেয় তার অন্তর্নিহিত কার্যকারণ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
৭. শিশু মনোবিজ্ঞান : শিশু মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। এ শাখা শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করে। মাতৃগর্ভে থাকালীন সময় থেকে শুরু করে যৌন পরিপক্কতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত শিশু মনোবিজ্ঞানের বিস্তৃতি। বয়স বাড়ার সাথে শিশুর যে শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে এবং শারীরিক বৃদ্ধির ফলে তার আচরণে কি পরিবর্তন ঘটে তা শিশু মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্যবিষয়। শিশুর সামাজিক পরিবেশ বিশেষ করে তার পরিবার, খেলার সাথী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে। শিশুর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, নৈতিক বিকাশ প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনাই শিশু-মনোবিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্য।
৮. সামাজিক মনোবিজ্ঞান : মানুষ সামাজিক জীব। তাকে সমাজে বসবাসের উপযোগী আচরণ করতে হয়। মানুষের সামাজিক আচরণই সমাজ মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু। সমাজে বাস করার সময়ে একের সাথে অন্যের ভাব বিনিময় হয়, পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া ঘটে। কি প্রক্রিয়ায় শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটে, সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো কিভাবে কাজ করে কিভাবে মনোভাব গড়ে উঠে, মনোভাব কিভাবে পরিবর্তিত হয়, গুজব কিভাবে এবং কেন ছড়ায়, জনমত কিভাবে গঠিত হয় এবং কিভাবে পরিমাপ করা যায়, সামাজিক পরিবেশ কিভাবে ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে, পূর্ব সংস্কার, অপরাধ এবং অপরাধ দমনের উপায় প্রভৃতি সমাজ মনোবিজ্ঞানের আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। সমাজ মনোবিজ্ঞানী। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, ব্যক্তির সাথে দলের এবং দলের সাথে দলের সম্পর্ক নির্ণয়ের চেষ্টা করে থাকেন।
৯. শারীরিক মনোবিজ্ঞান : উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দেওয়া জীবের বৈশিষ্ট্য। উদ্দীপকের প্রতি সাড়া বা প্রতিক্রিয়াই হলো। আচরণ। আর আচরণের মূলে রয়েছে শারীরিক ভিত্তি। কোন আচরণের মূলে কোন শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জড়িত তা physiological psychology আলোচনা করে। পরিবেশের সাথে সুষ্ঠু সংগতিবিধান শরীরাভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যাবলির উপর নির্ভর করে। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এ পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর অভিজ্ঞতা লাভ করি। স্নায়ুতন্ত্র, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন। প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় ঘটনার দ্বারা আচরণ ও মানসিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। মনোবিজ্ঞানকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে আসার মূলে রয়েছে শারীরবৃত্তীয় ঘটনাবলি ।
১০. নির্দেশনা ও পরামর্শ মনোবিজ্ঞান : দৈনন্দিন জীবনে মানুষ হাজারও সমস্যার সম্মুখীন হয়। সঠিকভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারলে দেখা দেয় হতাশা। তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এমনিতর মৃদু আচরণ সমস্যার সমাধানের নিমিত্তে গড়ে উঠেছে Counseling and guidance psychology. মৃদু আচরণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি যখন কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন তাকে Counseling and guidance psychologist এর দ্বারস্থ হতে হয়। Counseling and guidance psychologist ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিগত, পেশাগত অথবা সামাজিক সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। ছাত্রজীবনের পাঠ্যক্রম নির্বাচন, সমস্যা ও অকৃতকার্যতা চাকরিতে সমস্যা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা, দাম্পত্য দ্বন্দ্ব ও কলহ, বার্ধক্যজনিত সমস্যা, অবসর গ্রহণজনিত সমস্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে Counseling and guidance psychologist এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১১. প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান : মনোবিজ্ঞানের আরেকটি ফলিত শাখা হলো Engineering psychology-এ শাখাটি Human Engineering নামেও পরিচিত। এ শাখার বিকাশ ঘটেছে বলতে গেলে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হতে। প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান হলো মূলত মনোবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিজ্ঞানের| সমন্বিত কর্মক্ষেত্র। এর লক্ষ্য হলো যন্ত্রকে মানুষের উপযোগীকরে তৈরি করা। অর্থাৎ যন্ত্র পরিকল্পনা এবং এ যন্ত্র পরিচালনার
জন্য ব্যক্তি বিশেষের উপযোগিতাই হলো এ শাখার প্রধানআলোচ্যবিষয়। যন্ত্রপাতির নকশা প্রণয়নে মনোবিজ্ঞানীগণ তাদেরমনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগ
করেন। Engineering psychology এর লক্ষ্য হলো ডিজাইনের পরিবর্তন করে জটিল যন্ত্রপাতিকে সহজ করে তৈরি করা এবং তা মানব কল্যাণে নিয়োজিত করা।
১২. অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞান : Abnormal psychology মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বর্ণনা করে এবং কোনো বিশেষ নীতির উপর ভিত্তি করে এসব আচরণকে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। কি কারণে অস্বাভাবিক আচরণের উদ্ভব ঘটে এবং অস্বাভাবিক আচরণের শারীরবৃত্তীয়, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ Abnormal psychology এর অন্তর্ভুক্ত। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং উপযুক্ত অভীক্ষার সাহায্যে অস্বাভাবিক আচরণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা Abnormal psychology এর আওতাভুক্ত। Abnormal psychology এর মূল কাজ হলো অস্বাভাবিক আচরণের স্বরূপ বিশ্লেষণ করা। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তথ্যসংগ্রহ করে তার কারণ নির্ণয় করা এবং | সবশেষে অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা।
১৩. অনুমাণ মনোবিজ্ঞান : মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু ক্ষমতা আছে। আমরা চিন্তা করতে পারি, সমস্যা সমাধান করতে পারি, Decision নিতে পারি, যা অন্য কোনো প্রাণী করতে পারে না। এগুলোকে এক কথায় বলা হয় higher mental process. • Higher mental process সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করে তাকে Cognitive psychology বলে।
১৪. মিশ্র সংস্কৃতি মনোবিজ্ঞান : প্রত্যেকটি দেশেই অনেক রকম সমাজ আছে এবং এক সমাজের সংস্কৃতি অন্য সমাজের সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন। এক সমাজের সংস্কৃতি অন্য সমাজের | সংস্কৃতিকে বা এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশের সংস্কৃতিকে যখন প্রভাবিত করে তখন তাকে Cross-cultural psychology বলে। ১৫. পরিবেশ মনোবিজ্ঞান : আমরা কিভাবে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যতা তৈরি করব, কোন ধরনের পরিবেশ আমাদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য উপযোগী, কোন ধরনের পরিবেশ | আমাদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে, কিভাবে পরিবেশকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তোলা যায় ইত্যাদি বিষয় Environmental psychology এর অন্তর্ভুক্ত।
১৬. ব্যক্তিত্ব মনোবিজ্ঞান কোনো দুটি ব্যক্তি এক রকম : নয়। একেক জনের ব্যক্তিত্ব একেক ধরনের। যেমন- কারও মধ্যে সততা আছে, কারও মধ্যে নেই। Personality আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছি। এভাবে বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের Personality নিয়ে Personality psychology আলোচনা করে।
১৭. আদালত মনোবিজ্ঞান : এটি মনোবিজ্ঞানের একটি নতুন পন্থা। আইনগত দিক নিয়ে এটি আলোচনা করে। কোনো ব্যক্তি আসামি হওয়ার পর পাগলের অভিনয় করে যদি সেক্ষেত্রে Forensic psychologist এদের উপর পরীক্ষা করে ঐ দেখেন যে, ঐ ব্যক্তি সত্যিকারের পাগল কি না।
. স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞান : এটিও মনোবিজ্ঞানের একটি নতুন শাখা। এটি Psychological factors এবং Physical diseases নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- কারও সামনে পরীক্ষা, কিন্তু বাড়ি থেকে টাকা পাঠাচ্ছে না, হলে সিট পাওয়া যাচ্ছে না, এভাবে একের পর এক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তখন আমাদের শরীরে কিছু পরিবর্তনের সৃষ্টি হয়। যেমন- মুখ শুকিয়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায় ইত্যাদি। এভাবে হার্টের উপরে চাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলে দেখা যাবে প্রথম দিকে ঠাণ্ডা অনুভব হয়, শরীরের বিভিন্ন অংশে দানা উঠতে দেখা যায়। তবে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, সকলের সমস্যা গ্রহণ করার ক্ষমতা সমান নয়।
১৯. নারী মনোবিজ্ঞান : পুরুষ এবং মেয়েরা সবদিক দিয়ে সমান নয়। এদের মধ্যে গঠনগত, আবেগিক এবং ব্যক্তিত্বগত দিক দিয়ে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। Psychology of woman মেয়েদের আবেগ, ব্যক্তিত্ব, গঠনগত দিক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ম আলোচনা করে থাকে।
২০. ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান : একজন ক্রীড়াবিদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, খেলার মান উন্নয়নে তার মনোবল কেমন থাকা উচিত, প্রতিপক্ষের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে Sports psychology আলোচনা করে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মনোবিজ্ঞানের ম বিচরণ রয়েছে। মনোবিজ্ঞানের পরিধি, শাখাপ্রশাখা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক কথায় বলা যেতে পারে, এ জগতের যা কিছু মানুষের সাথে সম্বন্ধযুক্ত তার সবই মনোবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।