উত্তর : ভূমিকা : ইতিহাস তথ্য নির্ভরশীল। মধ্যযুগের প্রায় সকল সুলতান ইতিহাস ও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। তারা শিল্পমনাও ছিল। কিন্তু কালের স্রোতে সব ঐতিহাসিক তথ্য
হারিয়ে গেছে। বর্তমানে যা কিছু উপাত্ত পাওয়া যায় ঐতিহাসিকদের নিকট তার মূল্য অত্যধিক। ঐতিহাসিক তথ্যের মধ্যে লিখিত উপাদান অন্যতম। লিখিত উপাদান সমসাময়িক সময়ের সুলতানি রুচি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপস্থাপক।
→ মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে লিখিত উৎস হলো : মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে লিখিত উৎসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত উৎস বিহীন বাংলার ইতিহাস পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না।
নিয়ে বাংলার ইতিহাসের লিখিত উৎসসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. তবাকাত-ই-নাসিরী : ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘তবাকাত-ই-নাসিরী’- র রচয়িতা মিনহাজউদ্দিন আবু উমর-বিন-সিরাজউদ্দিন আল জুরজানী । ২৩ খণ্ড সংবলিত গ্রন্থটি ১২৬০ সালে লেখা শেষ হয়। এ গ্রন্থে মুসলিম বাংলার মূল্যবান শাসন সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে।
২. রিয়াজ-উস-সালাতিন: সৈয়দ গোলাম হোসেন সলিম ১৭৮৭-৮৮ সালে বিভিন্ন ফারসি গ্রন্থ হতে তথ্য সংগ্রহ করে এ গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থে মুসলিম রাজত্বে বাংলা, বিহার ও আসামের ইতিহাস রচিত।
৩. কিরান-উস-সাদাইন : ভারতের তোতাপাখি আমীর খসরু এ গ্রন্থটি ১২৮৯ সালে শেষ করেন। তিনি ১২৮৭ সালে সরজু নদীর
তীরে পিতা-পুত্র কায়কোবাদ ও বুখরা খানের মিলন তুলে ধরেছেন।
৪. তারিখ-ই-মোবারকশাহী : দিল্লির সুলতান মোবারক শাহের সময়ে ইয়াহিয়া-বিন-আহমদ বিন আবদুল্লাহ সরহন্দী এ গ্রন্থটি রচনা করেছেন। যেখানে মোহাম্মদ খুবী- ১৪২৪ সাল
পর্যন্তও বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে লেখা আছে।
৫. ফুতুহ-উস-সালাতিন : আলাউদ্দিন বাহমান শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় আব্দুল মালিক ইসামী (১৩৪৯ সালে গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থে ১১০০০ এর বেশি পঙক্তি আছে বলে একে ভারতের শাহনীমা বলা হয় । বাংলার শাসন সম্পর্কে কিছু লেখা আছে এ গ্রন্থে।
৬. তারিখ-ই-ফিরোজশাহী : জিয়াউদ্দিন বারানি ১৩৫৭ সালে এ গ্রন্থটি শেষ করেন । এখানে বাংলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। .
৭. বাহারিস্তান-ই-গায়বী : ৪র্থ খণ্ডে বিভক্ত এ গ্রন্থটির রচয়িতা মির্জা নাথান আলাউদ্দিন ইস্পাহানি। এ গ্রন্থে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন
ও বাংলায় মুসলিম রাজত্বকাল সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা দেওয়া আছে ।
উপসংহার : পরিশেষে একথা বলা যায় যে, বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস জানতে হলে অবশ্যই লিখিত গ্রন্থের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। উপরিউক্ত লিখিত উৎস হতে আমরা মধ্যযুগে বাংলার সঠিক ইতিহাস জানতে ও পরিচিত হতে পারি।