উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগে বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটে। বৈষ্ণব ধর্মের মূলে রয়েছে প্রেমধর্ম। প্রাক্-বৈষ্ণব যুগে উপমহাদেশে ধর্মীয় দর্শনগুলো ছিল নিতান্তই রক্ষণশীল। তাই প্রেমধর্ম বা প্রেমাত্মক দর্শনকে কেন্দ্র করে বৈষ্ণব ধর্মের উদ্ভব ঘটে। বাংলায় এ ধর্মের প্রচারক ছিলেন শ্রীচৈতন্য। শ্রীচৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্ম ছিল মূলত একটি প্রতিরক্ষামূলক আন্দোলন।
মধ্যযুগে বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম প্রসার লাভের কারণ : মধ্যযুগে বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম প্রসারের মূলে কতকগুলো কারণ বিদ্যমান রয়েছে। এর মূল কারণ হলো হিন্দুধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করা। মধ্যযুগে বাংলায় ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। ফলে ইসলামের সাম্যের বাণীতে আকৃষ্ট হয়ে বর্ণবাদী নিম্নশ্রেণির হিন্দুগণ দলে দলে নিজধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করতে থাকে। এর ফলে শ্রীচৈতন্যসহ চিন্তাশীল হিন্দুগণ ইসলামের আদর্শে হিন্দুধর্মের সংস্কার করে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেন। তারা জাতিভেদ প্রথা, বর্ণভেদ প্রথা, সামাজিক অত্যাচার ও শোষণের অবসান ঘটিয়ে ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শে
সামাজিক জীবন পুনর্গঠন করে হিন্দু সমাজকে রক্ষা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। হিন্দু সমাজ যাতে সাম্যের ভিত্তিতে পুনর্গঠিত হয়ে মুসলমান সমাজের মোকাবিলা করতে পারে সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। বৈষ্ণব ধর্ম প্রসার লাভের সবচেয়ে বড় কারণ হলো হিন্দুদেরকে নিজ ধর্ম ত্যাগ থেকে বিরত রাখা।
এম আর তরফদারের মতে, অনেক মুসলমান শ্রীচৈতন্যের মতবাদ গ্রহণ করেছিল। তাছাড়া বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাকে শ্রদ্ধা করতেন। এভাব শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্ম বাংলাসহ সারা ভারতে বিস্তার লাভ করে। মুসলমানদের মধ্যেও চার শিষ্য ছিল। উল্লিখিত কারণগুলোর প্রেক্ষিতে মধ্যযুগে বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটেছিল তৎকালীন হিন্দু সমাজকে
ক্ষা করতে। নিম্নশ্রেণির হিন্দুদেরকে ধর্মান্তরিতকরণ থেকে রক্ষা করতে। বৈষ্ণবগণ হিন্দুধর্মে সাম্যের বাণী নিয়ে আসেন। মধ্যযুগের কলুষিত বর্ণবৈষম্যমূলক সমাজকে সাম্য ও প্রেম ধর্মের মাধ্যমে সংস্কার করে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসা বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য।