উত্তর : ভূমিকা : মুঘল শাসনামলের ইতিহাসে “বাহারিস্তান- ই-গায়বী” বাংলা ইতিহাস সম্পর্কিত অন্যতম উৎস। বাংলার সুবেদারদের শাসনব্যবস্থার উপর সুবিন্যস্তভাবে লেখা আছে এ গ্রন্থে। বাহারিস্তানে বাংলার মুসলিম রাজত্বকাল সম্পর্কে ইতিহাস ভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ তথ্য বর্ণনা করা আছে। মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে বাহারিস্তান-ই-গায়বী : মির্জা নাথান আলাউদ্দিন ইস্পাহানি ‘বাহারিস্তান-ই-গায়বী’ গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন। ১০৫০ হিজরি, ১৬৪০ সালের পূর্বে গ্রন্থটি পুস্তাকারে প্রকাশিত হয়। সম্রাট শাহজাহানের নিকট ১৬৬১ সালে হস্তান্তরিত করা হয় । বাহারিস্তান গ্রন্থটিকে ৪ খণ্ডে বিন্যাস করা হয়। যথা-
প্রথম খণ্ড : ইসলামনামা;
দ্বিতীয় খণ্ড : ইব্রাহিমনামা;
তৃতীয় খণ্ড : শাহজাহাননামা ও
চতুর্থ খণ্ড : ওয়াকিয়াতে জাহানশাহী ।
→ বাহারিস্তান-ই-গায়বীর বর্ণনা : ভারতবর্ষের মুসলিম শাসন ও বাংলার মুসলিম শাসন সম্পর্কে এখানে বর্ণনা আছে। ইসলাম খাঁর বাংলায় সুবাদার নিযুক্তি, বিদ্রোহী কর্তৃক সোনাবাজু আক্রমণ, ইসলাম খা বনাম প্রতাপাদিত্যের সাক্ষাৎ, ইসলাম খাঁর
ঘোড়াঘাট যাত্রা, ফতেহবাদ অভিযান, মুসা খাঁর সোনারগাঁওয়ে পলায়ন, শাহী বাহিনী দ্বারা সোনারগাঁ অধিকার, ফিরিঙ্গি জলদস্যু
দ্বারা দাউদ খানের মৃত্যু, মুসা খাঁর সোনারগাঁওয়ে পলায়ন, ইসলাম খাঁ দ্বারা বাদশাহের ফরমান গ্রহণ, তার গোপন মৃত্যু
দাফন, মৃত দেহের শেষ শ্রদ্ধা, প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে অভিযান,।শেখ কামালের জাহাঙ্গীর নগর যাত্রা, বাদশা কর্তৃক কাসিম খাঁর
বাংলার সুবাদার নিযুক্তি প্রভৃতি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যায় যে, মির্জা নাথান তার বাহারিস্তান-ই-গায়বীতে মুঘল ঢাকার বিষদ বর্ণনা রেখে গেছেন।
এছাড়াও বাংলার প্রাচীন ইতিহাস উদঘাটনে যে সকল ইতিহাস গ্রন্থ অবদান রেখেছে, তার মধ্যে বাহারিস্তান-ই-গায়বীর অবদান অপরিসীম। এ গ্রন্থটি সত্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের উপর নির্ভর করে রচিত হওয়ার
আধুনিক বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।