অথবা, মধ্যমা ও প্রচুরক কী? মধ্যমা ও প্রচুরকের ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মধ্যমা ও প্রচুরক কাকে বলে? মধ্যমা ও প্রচুরকের প্রয়োগ, সবলদিক ও দুর্বলদিকসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : পরিসংখ্যানে তথ্যাবলি সংগ্রহের পর সেগুলোর গবেষণা পরিচালনার জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। তথ্যকে সহজসরলভাবে উপস্থাপনের প্রয়োজন হয়। এজন্য তথ্যাবলিকে শ্রেণিবন্ধকরণ, সারণির গণসংখ্যা নিবেশনে প্রকাশ করা হয়। তথ্যাবলির বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য জানার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়।
মধ্যমা (Median) : কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের পদ্ধতি তিনটি হলো গড়, মধ্যমা ও প্রচুরক। মধ্য বুঝায় কোন তথ্যসায়িকে মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে যে সংখ্যাটি ঠিক মাঝখানে থাকে অর্থাৎ, যে সংখ্যাটি তথ্যসারিকে মুক্ত সমান অংশে বিভক্ত করে থাকে অর্থাৎ তথ্যসারিকে মানের ক্রমানুসারে সাজালে ঠিক মাঝখানের রাশিটিই হলো মধ্যমা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদগণ মধ্যমার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের উল্লেখযোগ কয়েকটি সংজ্ঞা দেওয়া হলো:
Brookes and Dick , “The median is defined as that value of the variable for which there are equal numbers of frequencies of greater and smaller values; in other words, if the observations are arranged in order of magnitude, the median is the middle observation. For 2 continuous distribution it is the value corresponding to the ordinate which devides the area under the frequency curve into two equal parts.” H. E. Garrett , “When ungrouped scores or other measures are arranged in order of size, the median is the midpoint in the series.”
মান্নান ও মেরী বলেছেন, “মধ্যমা কেন্দ্রীয় প্রবণতার একটি অবস্থলাভিত্তিক পরিমাপ, যা তথ্যসারির মাঝখানে অবস্থান করে। তথ্যসারিকে মানের উচ্চক্রম অথবা নিম্নক্রম অনুসারে সাজালে যে সংখ্যাটি তথ্যসারির মাঝখানে অবস্থান করে এবং তথ্যসারিকে সমান দু’ভাগে বিভক্ত করে তাকে মধ্যমা বলে।”
Youlun Chou C, “The median as it name, indicates is the value of middle item in the series, when items are arranged according to magnitude,”
Antony Walsh, “The median is the value that splits the distribution exactly in half.” অধ্যাপক ঘোষ এন্ড চৌধুরী বলেছেন, “মধ্যমা রাশি তথ্যমালাকে দু’টি সমান অংশে বিভক্ত করে, এক অংশে প্রতিটি রাশির মান মধ্যমা থেকে ছোট এবং অপর অংশের প্রতিটি রাশির মান মধ্যমা থেকে বড় হয়। যেমন- ৭, ৯, ১৩, ১৫, ১৯, ২৭, ৩১ এ রাশিগুলোকে মানের ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে। এখানে মধ্যম মান ১৫। ১৫ এর বামদিকে প্রতিটি রাশির মান ছোট এবং এর ডানদিকে প্রতিটি রাশির মান বড়।
প্রচুরক (Mode) : মধ্যক মানের তৃতীয় পরিমাপ হলো প্রচুরক। প্রচুরকের অবস্থান সারির সর্বোচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট বিন্দুতে। কোন রাশি তথ্যমালার মধ্যে যে মানটি সর্বাপেক্ষা অধিক বার পাওয়া যায়, তাকে প্রচুরক বলে। একটি গণসংখ্যা নিবেশনে যে শ্রেণির গণসংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে প্রচুরক সে শ্রেণিতে অবস্থান করে। অবিন্যস্ত রাশির ক্ষেত্রে সংখ্যামানসমূহকে ক্রমানুসারে সাজালে যে মানগুলো সর্বাধিকবার ব্যবহৃত হয় সেটাই প্রচুরত।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদগণ মধ্যমার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের উল্লেখযোগ্য
Brookes and Dick , The mode of a distribution is therefore the most frequent or most ‘popular’ value of the variable.” [Introduction to Statistical Thod, P-35]
Hegrrett বলেছেন, “In a simple ungrouped series of measures the ‘Crude’ or ’empirical mode is that single measure or score which occurs most frequently.”
মানুনান ও মেরী বলেছেন, —- তথ্যসারিতে বিদ্যমান রাশিগুলোর মধ্যে যে রাশিটির গণসংখ্যা বেশি তাকে প্রচুরক বলে। যেমন- ৬, ১৩, ২০, ১৯, ২০, ১৮, ২০, ৪০ এ রাশিমালার ২০ এর ব্যবহার বেশি। এখানে প্রচুরক মান ২০। Broadly এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “The mode is the value of the variable that occurs most frequently কোন কোন তথ্যসারিতে প্রচুরক থাকে না আবার কোন কোন তথ্যসারিতে একাধিক প্রচুরক থাকতে পারে।
মধ্যমার ব্যবহার : কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি সংখ্যাত্মক মান ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর সুস্পষ্ট উপস্থাপন সম্ভব হয় না। এসব ক্ষেত্রে মধ্যমার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অসম শ্রেণিব্যাপ্তি সংবলিত তথ্যসারির ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়। বেশি। বঙ্কিম নিবেশনে এর ব্যবহার করা হয়। অস্বাভাবিক বড় বা ছোট মান সংবলিত তথ্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গড় নির্ণয় সম্ভব হয় না এবং সেক্ষেত্রে মধ্যমার ব্যবহার হয়। সামাজিক বিভিন্ন গবেষণায় অর্থাৎ, সামাজিক
বিজ্ঞানের গবেষণায় মধ্যমার ব্যবহার সর্বাধিক। বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে মধ্যমার ব্যবহার অনেকটা সীমিত।
প্রচুরকের ব্যবহার : দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে প্রচুরকের ব্যবহার হয়।আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ব্যবসায়
বাণিজ্য, নৌচলাচল, অর্থনৈতিক কার্যাবলি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রচুরকের ব্যবহার হয়। পরিমাণবাচক তথ্য ব্যবহার না করা গেলে গুণবাচক তথ্য প্রকাশে এর ব্যবহার হয়। বাজার সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে প্রচুরক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচুরকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীগণ সর্বাধিক সংখ্যক ক্রেতার রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের গত মানের নির্ধারণ করেন।
মধ্যমা ব্যবহারের সুবিধা : মধ্যমা ব্যবহারের সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১.সহজে নির্ণয় : মধ্যমা নির্ণয় পদ্ধতি সহজ।
২.সহজে বুঝা যায় : মধ্যমা সহজে বুঝা যায় ।
৩. নমুনা বিচ্যুতির প্রভাব : মধ্যমা নমুনা বিচ্যুতি দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।
৪.একটিমাত্র মধ্যমা : একটি রাশিমালার একটিমাত্র মধ্যমা থাকে। প্রচুরকের ক্ষেত্রে যেটা একাধিক থাকতে পারে।
৫. লেখচিত্রে প্রকাশ : মধ্যমা লেখচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
6. সুস্পষ্ট সংজ্ঞা : মধ্যমার সুস্পষ্ট সংজ্ঞা আছে।
৭.গাণিতিক প্রক্রিয়ার ব্যবহার : গাণিতিক প্রক্রিয়ার ব্যবহার ছাড়াও মধ্যমা নির্ণয় করা যায়।
৮. গুণবাচক তথ্য : গুণবাচক তথ্য হতেও মধ্যমা নির্ণয় করা যায় ।
১. যে কোন সংখ্যা : যে কোনো সংখ্যা তথ্য থেকে মধ্যমা নির্ণয় করা যায়।
১০. তথ্যসারির মধ্যে অবস্থান : মধ্যমা মান তথ্যসারির মধ্যে অবস্থান করে।
১১. তথ্য রাশির মান অজানা : মধ্যমা মান নির্ণয় তথ্য রাশির মান অজানা থাকলেও সম্ভব।
মধ্যমা ব্যবহারের অসুবিধা : মধ্যমা ব্যবহারের অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১.নির্দিষ্ট মান গ্রহণ : মধ্যমা নির্ণয়ে নির্দিষ্ট মান গ্রহণ করা হয় । মধ্যমা নির্ণয়ে সকল মানের গুরুত্ব দেওয়া হয় না ।
২.জটিল প্রক্রিয়া : রাশিগুলো ক্রমানুসারে সাজিয়ে মধ্যমা নির্ণয় করা হয়, যা একটি জটিল প্রক্রিয়া ।
৩.বীজগণিতের নিয়ম : মধ্যমা নির্ণয়ে বীজগণিতের নিয়ম প্রয়োগ করা যায় না।
৪.একাধিক গ্রুপ : একাধিক গ্রুপের ক্ষেত্রে মধ্যমা নির্ণয় করা যায় না ।
৫.কম সংখ্যা : রাশিমালায় সংখ্যা কম ব্যবহৃত হলে মধ্যমা নির্ণয় করা যায় না।
৬.অবিচ্ছিন্ন চলক : অবিচ্ছিন্ন চলকের মধ্যমা নির্ণয় সহজ নয় ।
৭.প্রন্তিক রাশির প্রভাব : প্রান্তিক রাশি পরিবর্তিত হলে মধ্যমার মান পরিবর্তিত হয় ।
৮.বেশি বড় তথ্য : বেশি বড় তথ্য হতে মধ্যমা নির্ণয় করা যায় না ।
৯.সঠিক প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না : মধ্যমা নির্ণয়ে সকল রাশি গণনা করা হয় না। এজন্য এটি কম
প্রতিনিধিত্বশীল ।
১০. অনিয়মিত নিবেশন : অনিয়মিত নিবেশন হতে মধ্যমা সঠিক ফলাফল প্রদান করতে পারে না।
প্রচুরক ব্যবহারের সুবিধা : প্রচুরক ব্যবহারের সুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১.সহজে নির্ণয় : প্রচুরক সহজে নির্ণয় করা যায় ।
২.সহজে বুঝা : প্রচুরক সহজে বুঝা যায় ।
৩.মুক্ত শ্রেণি : মুক্তশ্রেণি ব্যাপ্তিবিশিষ্ট উপাত্ত হতে প্রচুরক নির্ণয় করা যায় ।
৪. লেখ চিত্র : প্রচুরক লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায় ।
৫.গুণবাচক তথ্য : গুণবাচক তথ্য হতে প্রচুরক নির্ণয় করা যায়
৬.চরম মান : প্রচুরক মান দ্বারা প্রভাবিত হয় না ।
৭.ব্যবহার বদলতা : প্রচুরক বেশি বেশি ব্যবহৃত হয় ।
প্রচুরক ব্যবহারের অসুবিধা : প্রচুরক ব্যবহারের অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
১.বীজগাণিতিক সূত্র : প্রচুরক নির্ণয়ে বীজগণিতের সূত্রাবলি ব্যবহার করা যায় না ।
২.অধিক গণসংখ্যা : অধিক গণসংখ্যা ছাড়া প্রচুরক নির্ণয় করা যায় না ।
৩. নমুনা বিচ্যুতি : প্রচুরক নির্ণয়ে নমুনা বিচ্যুতির প্রভাব বেশি ।
8.অস্পষ্ট সংজ্ঞা : প্রচুরকের সংজ্ঞা অস্পষ্ট ।
৫. শ্রেণির সমান দৈর্ঘ্য : সমশ্রেণি বিশিষ্ট রাশি ছাড়া প্রচুরক নির্ণয় করা যায় না ।
৬.ক্ষুদ্র তথ্যরাশি : ক্ষুদ্র তথ্যরাশি হতে প্রচুরক নির্ণয় করা যায় না ।
৭.একাধিক প্রচুরক : কোন কোন ক্ষেত্রে একাধিক প্রচুরকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।
৮.অনিশ্চিত ফলাফল : প্রচুরকের ফলাফল অনিশ্চিত হতে পারে ।
৯.সকল মানের ব্যবহার : প্রচুরক নির্ণয়ে রাশিমালার সকল মান ব্যবহৃত হয় না ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মধ্যমা ও প্রচুরকের ব্যবহারে বেশকিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে । প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে এর সম্ভাব্য অসুবিধাগুলো দূর করা যেতে পারে ।