ভূত চৈতন্যবাদ ও দেহাত্মবাদ বলতে কী বুঝ?

অথবা, ভূত চৈতন্যবাদ ও দেহাত্মবাদের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, ভূত চৈতন্যবাদ ও দেহাত্মবাদ কাকে বলে?
অথবা, ভূত চৈতন্যবাদ ও দেহাত্মবাদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক জগত্তত্ত্ব তার জ্ঞানতত্ত্বের ফলস্বরূপ। চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। প্রত্যক্ষ যদি একমাত্র প্রমাণ হয় তাহলে যাকে প্রত্যক্ষ করা হলো তারই সত্তা স্বীকার করে নিতে হয়। জড়বস্তুর অস্তিত্বই কেবলমাত্র প্রত্যক্ষের বিষয়। জড়েরই কেবলমাত্র সত্তা আছে। একইভাবে চার্বাক সম্প্রদায় জড়বাদের প্রতিষ্ঠা করল ।
ভূত চৈতন্যবাদ ও দেহাত্মবাদ : অন্তঃপ্রত্যক্ষের মাধ্যমে আমরা সোজাসুজি আমাদের মানসিক অবস্থাগুলোকে জানি এবং এ মানসিক অবস্থাগুলো থেকে চেতনার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করি। চেতনা যেহেতু প্রত্যক্ষগ্রাহ্য। চার্বাক মতে তার অস্তিত্ব আছে, কিন্তু চেতনার আশ্রয়রূপে কোন অজড় নিত্য দ্রব্য রূপ আত্মার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। চেতনা দেহের ধর্ম। কোন অপ্রত্যক্ষগ্রাহ্য আত্মারূপ অতীন্দ্রিয় সত্তার স্বাভাবিক ধর্ম বা গুণ নয়। ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চারটি উপাদানের সংমিশ্রণে যখন জীবদেহ উৎপন্ন হয় তখন সেই দেহে চৈতন্যরূপ একটি নতুন গুণের আবির্ভাব ঘটে। চৈতন্যবিশিষ্ট দেহই আত্মা, দেহাতিরিক্ত কোন অজড় বা অতীন্দ্রিয় আত্মার অস্তিত্ব নেই। আমি রুগ্ন, আমি অন্ধ, আমি কৃশ, আমি পঙ্গু এসব উক্তি যখন করা হয় তখন আমি বলতে লোকে দেহকেই বোঝে। দেহরূপ আমিই রুগ্ন, অন্ধ, কৃশ বা পঙ্গু হতে পারে, দেহ আত্মা না হলে এসব কথা সার্থক হয় না। বিশেষ্য আমি, বিশেষণ ‘রুগ্ন দেহরূপী’ আত্মাকে বোঝাচ্ছে। দেহ রূগ্ন হলে লোকে বলে আমি রুগ্ন। দেহ বিনষ্ট হলে চৈতন্য বিনষ্ট হয় এবং যেসব উপাদানে দেহ গঠিত হয় সেগুলো চতুর্ভূতে মিশে যায়। ‘আমার দেহ’
এই কথাও কেউ কেউ বলে। কিন্তু এটি উপচারিক প্রয়োগ যেমন- রাহুর মস্তক। অর্থাৎ রাহুর মস্তক এবং রাহু অভিন্ন, কথার কৌশলে ভিন্ন মনে হয়। সে রকম কথার কৌশলে ভিন্ন বলে মনে হলেও আমার দেহ এবং আমি অভিন্ন। দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী মহাশয় চার্বাক মত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার দেহ’ এই ব্যবহার অবলম্বন করে যদি সিদ্ধান্ত করতে হয় যে, আত্মাই আমি, দেহ আমার বটে, কিন্তু আমি নয়, তাহলে এই সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত হবে না। কারণ আমরা যেমন ‘আমার দেহ’, এইরূপ প্রয়োগ করি তেমনই ‘আমার আত্মা’ একথাও বলে থাকি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সব চার্বাকই একটি বিষয়ে একমত যে, দেহের বিনাশের পরে আত্মার অস্তিত্ব থাকে না। সেই কারণেই তারা জন্মান্তর, স্বর্গ, নরক, কর্মবাদ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে স্বীকার করতে চায় না।