ভাষা কর্জ করার ব্যাপারে বঙ্কিমচন্দ্রের অভিমত?

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভাষা কর্জের ব্যাপারে একটি মতামত প্রকাশ করেছেন তাঁর লেখায়। তিনি বলেছেন, ভাষা কর্জ একটি দারিদ্র এবং নিষ্পাপ ব্যক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করে। এটি মানুষের মধ্যে অদৃশ্য এবং শক্তিশালী একটি বন্ধু, যার কোনো দাম নেই, তবে এটি মানুষকে আধুনিক সমাজের বন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটি তাদের প্রতি একটি অসুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে, এবং এটি তাদের মনে প্রবেশ করে এবং তাদের কাজ ও অনুভূতি দেখানোর জন্য স্পর্শ করে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভাষা কর্জের বিষয়ে বিশদে তাঁর মতামত বিভিন্ন রচনায় ব্যক্ত করেছেন। ভাষা কর্জ অর্থাৎ ভাষা ধার করা বা অনুকরণ করা নিয়ে তাঁর অভিমত নিম্নরূপ:

  1. স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা: বঙ্কিমচন্দ্র মনে করতেন, ভাষার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বিশ্বাস করতেন, অন্য ভাষার শব্দ ও বাক্যগঠন অনুকরণ করা ভাষার স্বকীয়তা নষ্ট করে। মাতৃভাষার নিজস্ব রীতি ও শব্দভাণ্ডারকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, যাতে ভাষার নিজস্বতা ও স্বকীয়তা অটুট থাকে।
  2. দেশজ শব্দের ব্যবহার: বঙ্কিমচন্দ্র দেশজ শব্দের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশজ শব্দের মাধ্যমে ভাষা সমৃদ্ধ হয় এবং এটি মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছে যায়। বিদেশি শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহার ভাষার সৌন্দর্য কমিয়ে দেয় এবং পাঠকের সাথে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়।
  3. অনুবাদের সঠিকতা: অনুবাদের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র সঠিকতা ও স্বচ্ছতার উপর জোর দিতেন। তিনি মনে করতেন, একটি ভালো অনুবাদ হওয়া উচিত যেটি মূল ভাষার ভাব ও প্রেক্ষাপটকে যথাযথভাবে ধরে রাখতে পারে। অনুবাদের মাধ্যমে ভাষা কর্জ না করে মূল ভাবকে প্রকাশ করা উচিত।
  4. শিক্ষা ও সাহিত্য: শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র অবগত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান শিক্ষার্থীদের জন্য সহজবোধ্য ও ফলপ্রসূ হয়। পাশাপাশি, সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহারকে তিনি উৎসাহিত করতেন, যাতে সাধারণ মানুষও সাহিত্যকে উপলব্ধি করতে পারে।
  5. ভাষার বিকাশ: ভাষার বিকাশের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র নিজস্ব রীতি ও শৈলীকে প্রাধান্য দিতেন। তাঁর মতে, ভাষা কর্জ করার পরিবর্তে ভাষার নিজস্ব সম্পদকে ব্যবহার করে ভাষার বিকাশ করা উচিত। এতে ভাষা আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এসব অভিমত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ভাষার নিজস্বতা ও স্বকীয়তা রক্ষায় সদা সচেষ্ট ছিলেন এবং তাঁর এই মনোভাব বাংলা ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতির অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রেখেছে।