অথবা, ভাষা আন্দোলনের সর্বশেষ ধাপ সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্যায়টি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্যায়টি সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভাষা আন্দোলন বাঙালির জীবনে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা জাগ্রত হয়। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্যায় : ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা। ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিনও এক জনসভায় ঘোষণা করেন, উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে দারুণ হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি প্রতীক ধর্মঘট ও সভা আহ্বান, ৩১শে জানুয়ারি একটি সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে এবং খাজা সাহেবের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ করে। ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ একটি সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী এক সাধারণ ধর্মঘটের এবং ঐ দিন ভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করে। আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠলে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এতে উত্তেজনা তীব্রতর হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্রছাত্রী সমবেত হয়। সকলের সম্মতিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম দলটি গেট থেকে রাস্তায় বের হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে ইট-পাটকেল বিনিময় হতে থাকে। পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে। বেলা ১২টার দিকে পুলিশের মোটা রশির বাধা পার হয়ে উত্তেজিত ছাত্ররা দলে দলে মেডিকেল কলেজ ও হোস্টেলের দিকে যেতে থাকলে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে পুনরায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এভাবে ছাত্র, পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে বেলা ৩টার দিকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এসময়ে উচ্চপদস্থ পুলিশ ও
সরকারি আমলারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা ছাত্রদের প্রাদেশিক আইন পরিষদের দিকে যেতে নিষেধ করলে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে উঠে। পুলিশ প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে এবং সে গুলিতে বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউর এবং আরো অনেকে শহীদ হন এবং অনেকে হন আহত। এতে সারা পূর্ব বাংলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্র-জনতা শহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজের সামনে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। এ মিনারটি উন্মোচন করা হয় শহীদ শফিউর রহমানের পিতাকে নিয়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানিরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবছর উদযাপিত হয়।