ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় লিখ।
অথবা, ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় সম্পর্কে লিখ।
অথবা, ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপটি সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়টি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সত্তাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়, যার প্রেক্ষিতে সূচিত হয় ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় : ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ
অধিবেশনে বাংলাকে অন্যান্য ভাষার সাথে অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উদ্যাপন করা হয় । প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন
পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতিনিধি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। লিয়াকত আলী খান, নাজিমউদ্দিন প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতা তাঁর প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন। ফলে ১৯৪৮ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে বাংলাভাষার সমর্থনে শ্লোগান দিতে থাকে । ভাষা আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ নামে এক সর্বদলীয়
পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য একটি প্রস্তাব করেন। সরকারি ভাষার তালিকা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানায়। দেশের সর্বত্র ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় লাঠিচার্জ করে। ফলে অনেকেই আহত ও গ্রেপ্তার হয়। ১১ মার্চের পুলিশের জুলুমের প্রতিবাদে ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৩ মার্চ হতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দেশের সকল জেলাতে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। ১৫ মার্চে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনের সঙ্গে সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক অনুষ্টিত হয়। অনেক তর্ক-
বির্তকের পর নাজিমউদ্দীন ও সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে ৭ দফাবিশিষ্ট এক চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তিগুলো নিম্নে দেয়া হলো : ১. ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার প্রশ্নে গ্রেপ্তারকৃত সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দান করা হবে।
২. পুলিশে অত্যাচারের বিষয়ে তদন্ত করে একটি বিবৃতি প্রদান করা হবে।
৩. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পরিষদে একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।৪. পূর্ব বাংলায় সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি উঠে যাওয়ার পর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করতে হবে।
৫. সংবাদপত্রের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।
৬. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
৭. ২৯ ফেব্রুয়ারি হতে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে।
১৯৪৭ সালের ২১ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। তখন থেকেই ছাত্রসমাজ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে এবং ‘না’, ‘না’ বলে তাঁর উক্তির প্রতিবাদ জানায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ছাত্ররা জিন্নাহের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন মিছিল, মিটিং এর আয়োজন করে। এর উদ্দেশ্য একটাই ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান করা।