অথবা, ভাষা আন্দোলনকে কেন বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি বলা হয়?
অথবা, ভাষা আন্দোলনকে কেন বাঙালির মুক্তির প্রথম সনদ বলা হয়? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির মুক্তির প্রথম আন্দোলন”-সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সত্তাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়। এর প্রেক্ষিতে সূচিত হয় ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির মুক্তির প্রথম আন্দোলন : বাঙালি জাতির মুখের ভাষা বাংলা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা পাবার পর তাদের নিজেদের ভাষা উর্দু বাঙালির উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রতিবাদী বাঙালি তা মেনে নেয়নি। তারা আন্দোলন, জীবনের বিনিময়ে বাংলাভাষার মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। আর এ ১৯৪৮-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালিদের মনে স্বাধীনতাবোধ জাগ্রত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দেলনের পর পুরো পঞ্চাশের দশক ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রাম ও চেতনার কাল, আর আইয়ুব খানের দশক ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রস্তুতিকাল । ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। এ আন্দোলন এদেশের মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এ আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানিদেরকে ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনা দিয়েছে। একুশের চেতনা আমাদেরকে আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে অপরিমেয় ইন্ধন যুগিয়েছে। এটি ছিল বাঙালিদের মুক্তির প্রথম আন্দোলন। একুশের চেতনা সকল স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মূলত ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে শিখিয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, সকল শ্রেণির মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এর পরিণতিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইতিহাসে তাই ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য অনেক। ভাষা আন্দোলন হয়েছে বলেই আমরা বাংলাভাষায় কথা বলতে পারছি। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের মানুষ বর্তমানে এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ।