ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের ধরন বেশ বৈচিত্র্যময় এবং বিশ্ববাজারে এর গুরুত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের ধরন নিম্নরূপে বর্ণনা করা যায়:
১. রপ্তানি (Export):
ভারত প্রধানত বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি করে থাকে। প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যসমূহ হল:
- কাপড় ও টেক্সটাইল: ভারত বিশ্বে অন্যতম বড় টেক্সটাইল রপ্তানিকারক দেশ।
- যন্ত্রাংশ ও মেশিনারি: অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের রপ্তানি।
- কৃষিপণ্য: চা, কফি, মশলা, চিনি, চাল, এবং তামাক।
- কাঁচামাল: লোহা ও ইস্পাত, রাসায়নিক পদার্থ, পেট্রোকেমিক্যাল।
- প্রযুক্তিগত পরিষেবা: আইটি ও আইটিইএস (Information Technology Enabled Services) সেক্টর থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
২. আমদানি (Import):
ভারত বহির্বিশ্ব থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকে, যেমন:
- তেল ও জ্বালানি: অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি।
- সোনা ও রূপা: গহনা ও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল।
- ইলেকট্রনিক পণ্য: মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি।
- রাসায়নিক পদার্থ: ঔষধের উপাদান এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ।
৩. বাণিজ্য ঘাটতি ও উদ্বৃত্ত (Trade Deficit and Surplus):
ভারত সাধারণত বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) নিয়ে কাজ করে, কারণ আমদানি রপ্তানির তুলনায় বেশি হয়। তবে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে ভারত বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Trade Surplus) অর্জন করে।
৪. বাণিজ্য অংশীদার (Trade Partners):
ভারতের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হল:
- যুক্তরাষ্ট্র: বিশেষ করে প্রযুক্তিগত পরিষেবার ক্ষেত্রে।
- চীন: উভয় দেশের মধ্যে প্রচুর পণ্য ও যন্ত্রাংশ আমদানি-রপ্তানি হয়।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন: বিশেষত কাপড় ও টেক্সটাইল এবং কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে।
- মধ্যপ্রাচ্য: মূলত জ্বালানি এবং পেট্রোকেমিক্যাল আমদানির জন্য।
৫. বাণিজ্য নীতি (Trade Policy):
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। বর্তমানে ভারত নিজের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বনির্ভরতা (Atmanirbhar Bharat) প্রকল্পে জোর দিচ্ছে, যার মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।
এই বৈচিত্র্যময় বাণিজ্যের ধরন ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিশ্ববাজারে এর প্রভাবও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।