ভক্তিবাদ সাধক গুরু নানকের পরিচয় দাও।

উত্তর : ভূমিকা : উত্তর ভারতে যে সকল ভক্তিবাদীদের উদ্যোগে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয় সাধিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে নানক অন্যতম। তিনি শিখ ধর্মের প্রবর্তক, সর্বধর্ম সহিষ্ণুতার নীতি প্রচার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তরিক মিলনের চেষ্টাতেই তিনি তার জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। কবীরের ন্যায় তিনিও হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই একথা বলতেন। গুরু নানকের জীবনী ও বাণী ভারতের হিন্দু-মুসলিম জনসমাজের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ বিষয়ে
কোনো সন্দেহ নেই।
[] পরিচয় : ১৪৬৯ সালে (বৈশাখ) বর্তমান পাকিস্তানের (পাঞ্জাব) অন্তর্গত লাহোরের অদূরবর্তী তালবন্দী গ্রামে (বর্তমান- নানকানা) জন্মগ্রহণ করেন গুরু নানক। তার পিতা কালু চাঁদ ছিলেন সাধারণ কৃষক ও ঐ গ্রামের জমিদারের হিসাবরক্ষক। সাত বছর বয়সে তাঁকে হিন্দি শেখানো হয়। এরপর সংস্কৃতি ও
ফার্সি ভাষা শিখেন। তার বোনের সহযোগিতায় নবাব দৌলত খাঁ লোদীর অধীনে একটি চাকুরি লাভ করেন যা ১৪৯৯ সাল পর্যন্ত করেন। ১৮ বছর বয়সে সুলাখিল এর সাথে বিয়ে হয়। ৩০ বছর বয়সে তিনি গৃহ ও চাকরি ছেড়ে ফকির হয়ে যান ।
→ কর্মজীবন : বাল্যকাল থেকে তিনি সাধুসঙ্গ পছন্দ করতেন যদিও তার পিতা তাকে হিসাবশাস্ত্রবিদ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তালবন্দী গ্রামের মুসলিম চারণ কবি মারদানাও তার সঙ্গে যোগ দেন। পরবর্তী ৪০ বছর তিনি বাংলা, আসাম, সিলন, তামিলনাড়ু ও কাশ্মির, তিব্বত, বাগদাদ, মক্কাসহ ভারত, শ্রীলংকার, ইরান ও আরবের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন এবং সর্বত্র নিজের ভাবনা প্রচার করতে থাকেন।
তার উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম সহিষ্ণুতার নীতি প্রচার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তরিক মিলন সাধন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে নানকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মূর্তি পূজা,
তীর্থযাত্রা ও ধর্মের নামে আচার-অনুষ্ঠান পালনের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের উপায় হিসেবে
ব্যক্তিগত জীবনে সদাচরণের উপর গুরুত্বারোপ করতেন। নানকের উপদেশ বলি আদি গ্রন্থতে সংকলিত করা হয়েছে।
১৫৩৯ সালে পাঞ্জাবের কর্তারপুরে নানকের জীবনাবসান ঘটলে তার মৃতদেহের সৎকার নিয়ে হিন্দু-মুসলিম শিষ্যদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় । নানক নিজে মৃত্যুকালে অঙ্গীদকে তার উত্তরাধিকারী নিয়োগ করে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যে সকল ভক্তিবাদী সাধক আজো অমর হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে গুরু নানক অন্যতম তিনি কোনো ধর্মের প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু
পরবর্তীতে তার উপদেশাবলি হতে শিখ ধর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটে। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই নানকের শিষ্য ছিল। অবশেষে বলা
যাক, গুরু নানক ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একটি সম্প্রদায় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/