উত্তর : ভূমিকা : জীবনের বন্ধন থেকে মুক্তি ও ঈশ্বরের সাথে বিলীন হওয়াই গুরুর বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শৈব ও বৈষ্ণব সাধুদের আবির্ভাব হয়। সাধুদের তিনটি মতবাদ
ছিল । যথা- i. কর্ম মর্গ; ii. জ্ঞান মর্গ; iii. ভক্তিমর্গ। গুরুদের এ মতবাদই ভক্তির মতবাদ নামে অভিহিত ছিল।
→ ভক্তিবাদ আন্দোলনের উদ্ভবের কারণ : কতিপয় কারণের সমষ্টিতে ভক্তিবাদ আন্দোলনের উদ্ভব হয়। কোনো একক কারণে
কোনো কিছুর সৃষ্টি হয় না। যথা-
১. উত্তর ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামি;
২. হিন্দু ধর্মের নিষ্পেষণ ও বর্ণবাদ প্রথার বাড়াবাড়ি;
৩. বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সাথে সংঘাত
৪. শংকরাচার্যের গোঁড়া হিন্দুবাদ ও দুর্বোধ্য দর্শন;
৫. ইসলাম ধর্মের সাম্যবাদ ও শান্তির বার্তা প্রচার;
৬. মুসলিম শাসকগণ কর্তৃক বহুমন্দিরের ধ্বংসায়ন। প্রভৃতি কারণে ভক্তিবাদ আন্দোলনের উদ্ভব হয়। শ্রেণি বিভেদ ও শ্রেণি
বৈষম্যের তীব্র জ্বালা হতে মুক্তির জন্য জনগণ ইসলাম ধর্ম বা একত্ববাদের ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। এতে করে হিন্দু সাধক ও কতিপয় গণ্য-মান্য ব্যক্তিবর্গ ভীত হয়ে পড়েন। তারা বিকল্প পথ হিসেবে ভক্তিবাদ আন্দোলন শুরু করে। বৈষম্যহীন, মানব কল্যাণকর কাজের কথা বলতে থাকেন। ফলে অনেক জনগণ ভক্তিবাদীদের শিষ্য হয় এবং হিন্দু ধর্ম ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরে আসে। কবির, নামক, চৈতন্য, রামানুজ প্রভৃতি ব্যক্তিরা পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তামিল গায়কেরা এদের ভক্তিমূলক গান গেয়ে এদেরকে সাহায্য
করেন। সব ধর্মের ও বর্ণের মানুষ ছিল, এমনকি স্ত্রী লোকও ছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভক্তিবাদ আন্দোলনে তামিল সাধুগণ এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেন। তারা স্থানীয় সহজ-সরল তামিল ভাষায় রচিত তামিল গায়কদের ভক্তিমূলক গান ও কবিতার মাধ্যমে এমন প্রবল ধর্মানুভূতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হন; যার ফলে বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম সেখান থেকে বিতাড়িত হয় ও হিন্দু ধর্ম সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত এবং ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা পায়।