ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসনের ভূমিকা বা গুরুত্ব আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায়, আইনের অনুশাসনের প্রভাব উল্লেখ কর।
অথবা, ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসন কীরূপ ভূমিকা পালন করে? লিখ।

উত্তরঃ ভূমিকা: আইনের অনুশাসন ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়।ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে বিভিন্ন সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবর্তনের সাথে সংগতি বজায় রেখে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে ১৬৮৮ সালে গৌরবময় বিপ্লবের পর থেকেই ইংল্যান্ডে ধীরে ধীরে এ ধারণা ব্যাপক প্রসার লাভ করে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়

ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসনের ভূমিকা বা গুরুত্ব: ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইনের অনুশাসনের ভূমিকা বা গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হল:

১. আইলের চোখে সকলেই সমান: ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে কোন ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সকল জনসাধারণ আইন ও সাধারণ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত। অর্থাৎ আইনের চোখে সকলেই সমান। মূলত আইনের অনুশাসনসমূহের পয়েন্টে এ ব্যবস্থা সক্ষম হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গভর্নর ওয়ালসের মামলা এনাটক বনাম ক্যাবিংটন মামলার সিদ্ধান্ত, যা ব্রিটেনের আইনকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করেছে।

২. আইনের প্রাধান্য: আইনের অনুশাসনের প্রথম নীতিতেই বলা হয়েছে যে, সাধারণ আইনের মাধ্যমে কোন আদালত ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া বৈধ নয়। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্রিটেন। সরকারের কার্যাবলির উপর আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আইনের বিধান ব্যতীত জনগণের জানমালের। ক্ষতিসাধন করা কোন সরকারের পক্ষেই আর সম্ভব হবে না। মূলত এটি তিষ্ঠিত হয়েছে আইনের অনুশাসনের দ্বারা।

৩. নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি: ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসন। অরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নাগরিকের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। ফলে পার্লামেন্টকে যে কোন সিদ্ধান্তের জন্য জনগণের উপর নির্ভর করতে হয়।

৪. নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ: ব্রিটেনের সংবিধান লিখিত না হওয়ায় নাগরিক অধিকারসমূহের কোন লিখিত দলিল নেই। এক্ষেত্রে নাগরিক অধিকারসমূহ আইনের অনুশাসন দ্বারাই সংরক্ষিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইনের অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা: ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব একটি অন্যতম শাসনতান্ত্রিক নীতি ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃত। আর পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আইনের অনুশাসনসমূহ। আইনের অনুশাসনের কারণেই পার্লামেন্টের আইনগত সর্বাত্মক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত এবং পার্লামেন্ট প্রণীত সব আইন বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ফরাসি লেখক ডি, লোমি মন্তব্য করেছেন, “পার্লামেন্ট প্রণীত এ সকল আইন নাগরিকের জন্য অত্যন্ত প্রযোজ্য এবং এ কারণে নাগরিকগণ এ আইন মানতে বাধ্য থাকে।”

৬. মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি: মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠায় ব্রিটেনের আইনের অনুশাসনের ভূমিকা স্পষ্ট। কমন্সসভায় ততক্ষণ পর্যন্তই মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় আসীন থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত কমদসভায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকে। এছাড়া মন্ত্রিসভা নির্বাচকমণ্ডলীর নিকট দায়ী থাকে এবং পরবর্তী সময়ের নির্বাচনে তাদের কত। নির্বাচকমনী কর্তৃক স্থির হয়ে থাকে।

৭. প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা: ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারটি হলেও তিনি আইনের উর্দে নন। সময়ের প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দ্রুত প্রসার লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে তার ক্ষমতা আইন দ্বারা সীমাবত। আম প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. ব্রিটেনের রাজা বা রাণীর ক্ষমতার যথার্থ প্রয়োগ: আইনের দৃষ্টিতে শাসন বিভাগের প্রধান হলেন ব্রিটেনের রাজা বা রাণী এবং তার নামেই বিচারকার্য পরিচালিত হয়। কিন্তু সরকার পরিচালনার কার্যকর দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ভাত্ত্বিকগত দিক থেকে রাজা বা রাণীর ক্ষমতা যতটুকু বাস্তব ক্ষেত্রে ততটুকু নয়। এক্ষেত্রে রাজা বা রাণী তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য আইনের অনুশাসনের সাহায্য নিয়ে থাকে।।

৯. গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা: ব্রিটেনে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার হাতিয়ার হচ্ছে আইনের অনুশাসন। বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠা আইনের অনুশাসনসমূহের মাধ্যমেই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং টিকে আছে। সুতরাং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১০. রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার রোধ: রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার রোধ করার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের আইনের অনুশাসন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আইনের অনুশাসনসমূহের যথার্থ প্রয়োগের ফলে জনগণ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং অধিকার রক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, A. V. Dicey প্রদত্ত আইনের অনুশাসনের ব্যাখ্যার
কার্যকারিতা ও প্রয়োগযোগ্যতা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আইনের অনুশাসন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার আদায়ে এক বলিষ্ঠ শক্তির ভূমিকা পালন করে। এ নীতি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছে। তাই নাগরিক অধিকারের সাথে আইনের শাসন ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।