অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলো কী কী?
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলোর নাম লিখ।
উত্তরঃ ভূমিকা: ব্রিটিশ সংবিধান কোন আইন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত হয় নি, কোন গণবিপ্লবের ফলশ্রুতি নয়, ব্রিটিশ সংবিধান বিবর্তনের ফল। বিবর্তনের মাধ্যমে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ সংবিধান গড়ে উঠেছে। বহু উৎস থেকে ব্রিটিশ সংবিধানের উৎপত্তি ঘটেছে। এজন্য এর আকার এত বৃহৎ যে কারও পক্ষে সারা জীবন অধ্যয়ন করেও এর কুলকিনারা পাওয়া যায় না।
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস: নিম্নে ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. সনদ ও চুক্তি পত্র: বিভিন্ন সময়ে ইংল্যান্ডের রাজা কর্তৃক স্বীকৃত ও গৃহীত কতকগুলো ঐতিহাসিক সনদ, সন্ধি ও
চুক্তিপত্র, ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উৎসসমূহের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
২. বিধিবদ্ধ আইন: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তার সার্বভৌম ক্ষমতা বলে সাধারণ আইনের সাথে সাথে শাসনতান্ত্রিক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছে। পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত এসব আইন শাসনতন্ত্রের উৎস হিসেবে স্বীকৃত।
৩. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত: ব্রিটিশ সংবিধানের আর একটি উৎস হল বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত। মামলা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারকগণ ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তির সংজ্ঞা দেন, ব্যাখ্যা করেন ও এগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন।তারা সংবিধানের আইনের রীতিসিদ্ধ অর্থ ও পরিধি নির্ধারণ করেন।
৪. প্রথাগত আইন: প্রথাগত আইন ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। প্রথাগত আইন হল কতকগুলো প্রচলিত ও প্রয়োজনীয় শাসনতান্ত্রিক প্রথা ও রীতিনীতি যা শতাব্দীব্যাপী চলতে চলতে আদালতের মাধ্যমেই আইন হিসেবে
স্বীকৃতি লাভ করেছে।
৫. শাসনতন্ত্র সংক্রান্ত গ্রন্থ: সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনবিদ ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের দ্বারা রচিত শাসনতান্ত্রিক সম্পর্কিত প্রামাণ্য পুস্তকসমূহ ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। এসব প্রামাণ্য গ্রন্থাদি ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের
উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
৬. শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি: শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেবল আইনের পদ্ধতির দ্বারা কোন শাসনব্যবস্থার যথার্থ রূপটি প্রতিভাব হয় না। এ কারণে আইনগত কাঠামোর সাথে সাথে শাসনতান্ত্রিক প্রথা ও রীতিনীতিগুলো আলোচনাও অপরিহার্য।
উপসংহার: অতএব বলা যায়, ব্রিটিশ সংবিধানের বহুবিধ উৎস রয়েছে। কোন একটি নির্দিষ্ট আইন বা দলিলের মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধানের সকল উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে না। এ সংবিধান হল প্রথা ও দৈব্যের সন্তান, যার গতিধারা কখনো দৈব দুর্ঘটনা, আবার কখনো বা উচ্চ পরিকল্পনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।