ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের প্রকৃতি আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের প্রকৃতি বর্ণনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের স্বরূপ বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের প্রাচীনতম সংবিধান হচ্ছে ব্রিটিশ সংবিধান এটি ‘The Mother of all Constitutions’ নামে পরিচিত। এ সংবিধান পৃথিবীর প্রায় অন্যান্য দেশের সংবিধান হতে স্বতঃপ্রভাবে গড়ে উঠেছে। এ সংবিধানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কোন নির্দিষ্ট গণপরিষদ বা কোন বিপ্লবী পরিষদ কর্তৃক অথবা কোন রাজাদেশ বলে ব্রিটিশ সংবিধান সৃষ্টি লাভ করে নি, বরং এটি এক দীর্ঘ, দ্বীর এবং অব্যাহত ও প্রধানত শান্তিপূর্ণ ক্রমবিবর্তনেরই ফল।

ব্রিটিশ সংবিধানের প্রকৃতি: ব্রিটেনের সংবিধান যথার্থই অভিনব প্রকৃতির। যার কারণে এ সংবিধানের প্রকৃতি নির্ধারণের প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সংবিধান বিশারদদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। সংবিধান বিশ্লেষণের মধ্যে এ মতপার্থক্য সৃষ্টির অন্যতম কারণ সংবিধানের অর্থগত পার্থক্য।

অর্থগত দিক থেকে ব্রিটেনের সংবিধানকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

ক. সংকীর্ণ অর্থে ব্রিটেনের সংবিধান এবং খ. ব্যাপক অর্থে ব্রিটেনের সংবিধান।

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

ক. সংকীর্ণ অর্থে ব্রিটেনের সংবিধান সংকীর্ণ অর্থে সংবিধান হল একটি দলিলে লিপিবদ্ধ দেশের শাসন সম্পর্কিত মৌলিক আইনসমূহ। এ এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, ব্রিটেনে কোন সংবিধান নেই ফরাসি পোক টকভিল, টমাস পেইন প্রমুখ চিন্তাবিদ ব্রিটিশ সংবিধানে এ সংকীর্ণ অর্থেই বিচার করেছেন এবং ব্রিটেনের সংবিধানকে সংকীর্ণ অর্থে বিচার করার পশ্চাতে তারা যেসব যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তা হল:

i. যে সকল মৌলিক নীতির দ্বারা ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলো কোন একটি দলিলে লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ নেই।

ii. ব্রিটেনের সংবিধান ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারায় গড়ে উঠায় এর নীতিসমূহ কোন বিশেষ সময়ে কোন নির্দিষ্ট গণপরিষদের দ্বারা সুপরিকল্পিতভাবে বিধিবদ্ধ হয় নি।

iii. ব্রিটেনের সংবিধানের বিভিন্ন নিয়মকানুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন লিখিত দলিল ও বিধিবদ্ধ আইন এবং বহু

iv. ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এসকল সাংবিধানিক নিয়মকানুনসমূহ সাধারণ আইনের মত যে কোন সময় পরিবর্তন করতে পারে।অলিখিত প্রথা ও রীতিনীতির মধ্যে।

খ. ব্যাপক অর্থে ব্রিটেনের সংবিধান। বর্তমান সময়ের আধুনিক সংবিধান বিশ্লেষকগণ ব্রিটেনের সংবিধানকে সংকীর্ণ অর্থে গ্রহণ করতে রাজি নন। তারা এ সংবিধানকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, জেনিংস, মুনরো প্রমুখ। আধুনিক এসকল সংবিধান বিশ্লেষকগণ ব্যাপক অর্থে ব্রিটেনের সংবিধানকে গ্রহণ করার পেছনে যেসব যুক্তি দেখিয়েছেন তা হল।

i. তাঁরা মনে করেন, কোন দেশের সংবিধান যে লিখিত হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই, বরং একটি দেশের সংবিধান লিখিত হতে পারে আবার অলিখিতও হতে পারে।

ii. দেশের শাসনব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে যেসব প্রথা বা রীতিনীতি গড়ে উঠে সেগুলো বিধিবদ্ধ আইনের মত আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয় এটা ঠিক নয়, বরং তারা মনে করেন এগুলোও সংবিধানের অংশ এবং শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ।

উপর্যুক্ত সার্বিক আলোচনার বিচারে ব্রিটিশ সংবিধানের প্রকৃতির দু’টি দিক লক্ষ্য করা যায়। যথা:

ক. অলিখিত এবং অবিধিবদ্ধ: ব্রিটিশ সংবিধান অপরাপর সংবিধানগুলোর মত লিখিত কিংবা বিধিবদ্ধ নয়।বিভিন্ন রকম প্রথা, রীতিনীতি এবং বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ সংবিধান বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এর সকল অংশ অলিখিত নয়। ব্রিটিশ সংবিধানের মৌল নীতির ও নিয়মাবলির অধিকাংশই ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তিপত্র, বিধিবদ্ধ আইন, বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত সংবিধান সম্পর্কিত গ্রন্থাদির মধ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে ব্রিটিশ সংবিধানে অলিখিত বিষয়বস্তুর আধিক্য অস্বীকার করা যায় না। তাই ব্রিটিশ সংবিধানকে ‘বহুলাংশে অলিখিত’ বলা যেতে পারে।

খ. রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের সমন্বয়: ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্রের এক
বিরল সমাবেশ ঘটেছে। ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে আছেন রাজা বা বাণী। আর ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় অভিজাততন্ত্রের প্রতীক হল প্রিভি কাউন্সিল এবং লর্ডসভা, তেমনি ব্রিটেনের জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত প্রভৃত ক্ষমতাসম্পন্ন কমন্সসভা, যা হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতীক।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যাপক অর্থে সংবিধান বলতে যা বুঝায় ব্রিটেনে তার অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। তবে এ সংবিধান লিখিত বা বিধিবদ্ধ নয় এবং হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেক সংবিধানই লিখিত ও
অলিখিত বিধি ও পদ্ধতির সমন্বয়। তবে ব্রিটিশ সংবিধানে অলিখিত বিষয়বস্তুর আধিক্য অস্বীকার করা যায় না।