অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে, তৈরি করা হয় নি”-মন্তব্য কর।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি করা হয় নি, এটি গড়ে উঠেছে”- উক্তিটি পর্যালোচনা কর।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধানের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: বিরাট রাজনৈতিক পরিবর্তন বা কোন এক সময়ে সংঘটিত রাষ্ট্র বিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র নতুনভাবে রচিত হয় নি বরং ইংরেজ জাতির উত্তবের প্রথম থেকেই তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের সাথে সাথে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র গঠিত ও বিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমান কালেও বিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের প্রাচীনতম সংবিধান হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ সংবিধানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কোন নির্দিষ্ট গণপরিষদ কর্তৃক ব্রিটিশ সংবিধান রচিত হয় নি বরং এটি এক দীর্ঘ, ধীর, অব্যাহত ও প্রধানত ক্রমবিবর্তনের ফল।
ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উত্তব ও ক্রমবিকাশ: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সংবিধানের উত্তবের ইতিহাস এবং ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রের উদ্ভবের ইতিহাস এক নয়। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা হল দীর্ঘদিনের ক্রমবিবর্তনের দল এবং এর বিবর্তনবারা আজও অব্যাহত। অধ্যাপক ফাইনার এটিকে “A constitution of never ending evolution” বলে অভিহিত করেছেন। ইংরেজ জাতির উত্তবের পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের মাধানে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছে। নিল্ড ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১. অ্যাংলো স্যাক্সন যুগ: অ্যাংলো স্যাক্সন উপজাতীয় লোকেরা ইউরোপীয় ভূখণ্ড থেকে পঞ্চম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে
আসে এবং সেমেটিক উপজাতীয়দের বিতাড়িত করে সেখানে বসতি স্থাপন করে। এ যুগেই ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিক।
২. রাজতন্ত্রের উদ্ভব: তৎকালীন ব্রিটেনের সাসেক্স, অ্যাসেক্স, ওয়াসেক্স, পূর্ব অ্যাঙ্গোলিয়া, মর্সিয়া, নদাথিয়া ও কেট
ইতিহাসের দু’টি মৌলিক সংস্থা ‘রাজতন্ত্র’ ও ‘সংসদীয়’ ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে।
এ রাজ্যগুলোর মধ্যে ওয়াসেক্স রাজ্যপ্রধান অন্যান্য রাজ্যগুলোর উপর সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অ্যাংলো স্যাক্সন যুগে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের সূত্রপাত ঘটায়।
৩. উইটান: অ্যাংলো স্যাক্সন যুগে উত্তরাধিকারসূত্রে রাজপদে আসীন রাজারা উইটান বা উইটেন গেমট গরিযদের সাহায্যে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। গুরুত্বপূর্ণ কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে উইটানের পরামর্শ গ্রহণ করা রাজার পক্ষে বাধ্যতামূলক না থাকলে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের যুগে এ পরামর্শ পরিষদের উত্তব শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৪. নর্দান যুগ: ১০৬৬ সালে নর্মান্ডির উইলিয়াম ইংল্যান্ড জয় করলে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের ক্রমবিকাশের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। সামন্তরাষ্ট্র ও রাজার সর্বসময় কর্তৃত্ব নর্মান যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৫. বৃহত্তর পরিষদ: উইলিয়ামের সময় থেকেই নর্মান রাজারা রাজ পরিবারের প্রধান কর্মচারী আর্চ বিশপ, বিশপ, আল, অ্যাবট ও নাইটদের নিয়ে গঠিত বৃহত্তর পরিষদের মাধ্যমে বিচারকার্য, আইন প্রণয়ন, করধার্য প্রভৃতি কার্যসম্পাদন করত এবং ওয়েস্টমিনিস্টারে এর অধিবেশন বসত।
৬. ক্ষুদ্রতর পরিষদ: অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজাকে সর্বদা সাহায্য করার জন্য ক্ষুদ্রতর পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদ দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় দ্বিতীয় হেনরির রাজত্বকালে এটি ভেঙে দেয়া হয় এবং ‘প্রিডিকাউন্সিল’ নামে একটি কার্যকরী সংস্থা গঠন করা হয়।
৭. বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণ: বারো শতকে দ্বিতীয় হেনরির রাজত্বকালে সর্বপ্রথম বিচার বিভাগ হতে শাসন বিভাগকে স্বতন্ত্রীকরণ বা পৃথক করা হয়।
৮. গোলাপের যুদ্ধ: ১৪৫৫-৮৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ইয়র্কগণ ও ল্যাভাস্টারদের মধ্যে সংঘটিত গোলাপের যুদ্ধে প্রাচীন।সামন্ত বংশগুলো ফাংস হয়ে ইংল্যান্ডে টিউডর বংশের স্বৈরশাসনের সূত্রপাত ঘটে।
৯. টিউডর যুগ ও চরম রাজতন্ত্র: টিউডর যুগে চরম রাজতন্ত্রের ধারক রাজা হেনরি, অষ্টম হেনরি এবং প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকালে পার্লামেন্ট বিশেষভাবে রাজা ও রাণীর অনুগত হয়ে পড়ে। টিউডরদের সময়ই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ নিজেদের প্রাত্যহিক কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে আরম্ভ করে।
১০. স্টুয়ার্ট যুগ: সপ্তদশ শতাব্দীতে স্টুয়ার্ট বংশের প্রথম রাজা প্রথম জেমস্ সাধারণ আইন যা পার্লামেন্টের বিরোধিতা করে বাজার ‘Theory of Divine Right’ তুলে ধরলে স্টুয়ার্ট রাজাদের সাথে পার্লামেন্টের বিরোধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
১১. অধিকারের আবেদনপত্র: ১৬২৮ সালে প্রথম চার্লসের রাজত্বকালেই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ একযোগে স্টুয়ার্ট রাজাদের স্বৈরাচারী শাসনের নিন্দা করে একটি ‘Petition of Rights’ পেশ করে। এ আবেদনপত্রে দাবি করা হয় যে, রাজা পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া কোন কর ধার্য করবে না। রাজা প্রথম চার্লস বাধ্য হয়ে এ দাবি মেনে নেন।
১২. গৌরবময় বিপ্লব: ১৬৫৮ সালে ক্রমওয়েলের মৃত্যু হলে পার্লামেন্ট ও স্টুয়ার্ট রাজাদের মধ্যে সংঘটিত বিরোধের মীমাংসা হয় বিনা রক্তপাতে ঐতিহাসিক ‘গৌরবময় বিপ্লব’ বা ‘Glorious Revolution’ এর মাধ্যমে। স্টুয়ার্ট রাজা দ্বিতীয় জেমস্ দেশ থেকে বিতাড়িত হন। ফলে স্টুয়ার্ট রাজাদের রাজত্বের অবসান ঘটে।
১৩. অধিকারের বিল (১৬৮৯): ব্রিটেনে শাসনতন্ত্রের বিবর্তন ও পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘Bill of Rights’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ইংল্যান্ডে রাজার ক্ষমতার পরিবর্তে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব ও নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৪. শস্য আইন ও সংস্কার আইন: ১৮১৫ সালে শস্যের আমদানি বন্ধ করে দেশীয় ভূস্বামীদের মুনাফা সংরক্ষণের জন্য শস্য আইন প্রণীত হয়। ১৮৩২ সালের সংস্কার আইনের ভিত্তিতে ভোটাধিকার সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয় এবং
১৯২৮ সাল নাগাদ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ২১ বছর বয়স্ক সকল নাগরিক ভোটাধিকার লাভ করে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ সংবিধান ও তার রাজনৈতিক জীবনের পরিচয় তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের সাথে সাথে গঠিত ও বিবর্তিত হয়েছে। একটি নিরবচ্ছিন্ন পরিবর্তনের স্রোতে এগিয়ে চলেছে। তাই একে অনেক সময় নদীর গতির সাথে তুলনা করা হয়। আইভর জেনিংস এর মতে, যদি ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র কতকগুলো দলিল নিয়ে গঠিত না হয়ে সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়। তবে বলা যায়, ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছে, তৈরি করা হয় নি। সুতরাং দীর্ঘ পনেরশ বছরের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সংবিধান বর্তমান অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে, তৈরি করা হয় নি”-মন্তব্য কর।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি করা হয় নি, এটি গড়ে উঠেছে”- উক্তিটি পর্যালোচনা কর।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধানের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: বিরাট রাজনৈতিক পরিবর্তন বা কোন এক সময়ে সংঘটিত রাষ্ট্র বিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র নতুনভাবে রচিত হয় নি বরং ইংরেজ জাতির উত্তবের প্রথম থেকেই তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের সাথে সাথে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র গঠিত ও বিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমান কালেও বিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের প্রাচীনতম সংবিধান হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ সংবিধানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কোন নির্দিষ্ট গণপরিষদ কর্তৃক ব্রিটিশ সংবিধান রচিত হয় নি বরং এটি এক দীর্ঘ, ধীর, অব্যাহত ও প্রধানত ক্রমবিবর্তনের ফল।
ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উত্তব ও ক্রমবিকাশ: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সংবিধানের উত্তবের ইতিহাস এবং ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রের উদ্ভবের ইতিহাস এক নয়। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা হল দীর্ঘদিনের ক্রমবিবর্তনের দল এবং এর বিবর্তনবারা আজও অব্যাহত। অধ্যাপক ফাইনার এটিকে “A constitution of never ending evolution” বলে অভিহিত করেছেন। ইংরেজ জাতির উত্তবের পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের মাধানে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছে। নিল্ড ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১. অ্যাংলো স্যাক্সন যুগ: অ্যাংলো স্যাক্সন উপজাতীয় লোকেরা ইউরোপীয় ভূখণ্ড থেকে পঞ্চম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে
আসে এবং সেমেটিক উপজাতীয়দের বিতাড়িত করে সেখানে বসতি স্থাপন করে। এ যুগেই ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিক।
২. রাজতন্ত্রের উদ্ভব: তৎকালীন ব্রিটেনের সাসেক্স, অ্যাসেক্স, ওয়াসেক্স, পূর্ব অ্যাঙ্গোলিয়া, মর্সিয়া, নদাথিয়া ও কেট
ইতিহাসের দু’টি মৌলিক সংস্থা ‘রাজতন্ত্র’ ও ‘সংসদীয়’ ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে।
এ রাজ্যগুলোর মধ্যে ওয়াসেক্স রাজ্যপ্রধান অন্যান্য রাজ্যগুলোর উপর সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অ্যাংলো স্যাক্সন যুগে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের সূত্রপাত ঘটায়।
৩. উইটান: অ্যাংলো স্যাক্সন যুগে উত্তরাধিকারসূত্রে রাজপদে আসীন রাজারা উইটান বা উইটেন গেমট গরিযদের সাহায্যে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। গুরুত্বপূর্ণ কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে উইটানের পরামর্শ গ্রহণ করা রাজার পক্ষে বাধ্যতামূলক না থাকলে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের যুগে এ পরামর্শ পরিষদের উত্তব শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৪. নর্দান যুগ: ১০৬৬ সালে নর্মান্ডির উইলিয়াম ইংল্যান্ড জয় করলে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের ক্রমবিকাশের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। সামন্তরাষ্ট্র ও রাজার সর্বসময় কর্তৃত্ব নর্মান যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৫. বৃহত্তর পরিষদ: উইলিয়ামের সময় থেকেই নর্মান রাজারা রাজ পরিবারের প্রধান কর্মচারী আর্চ বিশপ, বিশপ, আল, অ্যাবট ও নাইটদের নিয়ে গঠিত বৃহত্তর পরিষদের মাধ্যমে বিচারকার্য, আইন প্রণয়ন, করধার্য প্রভৃতি কার্যসম্পাদন করত এবং ওয়েস্টমিনিস্টারে এর অধিবেশন বসত।
৬. ক্ষুদ্রতর পরিষদ: অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজাকে সর্বদা সাহায্য করার জন্য ক্ষুদ্রতর পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদ দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় দ্বিতীয় হেনরির রাজত্বকালে এটি ভেঙে দেয়া হয় এবং ‘প্রিডিকাউন্সিল’ নামে একটি কার্যকরী সংস্থা গঠন করা হয়।
৭. বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণ: বারো শতকে দ্বিতীয় হেনরির রাজত্বকালে সর্বপ্রথম বিচার বিভাগ হতে শাসন বিভাগকে স্বতন্ত্রীকরণ বা পৃথক করা হয়।
৮. গোলাপের যুদ্ধ: ১৪৫৫-৮৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ইয়র্কগণ ও ল্যাভাস্টারদের মধ্যে সংঘটিত গোলাপের যুদ্ধে প্রাচীন।সামন্ত বংশগুলো ফাংস হয়ে ইংল্যান্ডে টিউডর বংশের স্বৈরশাসনের সূত্রপাত ঘটে।
৯. টিউডর যুগ ও চরম রাজতন্ত্র: টিউডর যুগে চরম রাজতন্ত্রের ধারক রাজা হেনরি, অষ্টম হেনরি এবং প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকালে পার্লামেন্ট বিশেষভাবে রাজা ও রাণীর অনুগত হয়ে পড়ে। টিউডরদের সময়ই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ নিজেদের প্রাত্যহিক কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে আরম্ভ করে।
১০. স্টুয়ার্ট যুগ: সপ্তদশ শতাব্দীতে স্টুয়ার্ট বংশের প্রথম রাজা প্রথম জেমস্ সাধারণ আইন যা পার্লামেন্টের বিরোধিতা করে বাজার ‘Theory of Divine Right’ তুলে ধরলে স্টুয়ার্ট রাজাদের সাথে পার্লামেন্টের বিরোধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
১১. অধিকারের আবেদনপত্র: ১৬২৮ সালে প্রথম চার্লসের রাজত্বকালেই পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ একযোগে স্টুয়ার্ট রাজাদের স্বৈরাচারী শাসনের নিন্দা করে একটি ‘Petition of Rights’ পেশ করে। এ আবেদনপত্রে দাবি করা হয় যে, রাজা পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া কোন কর ধার্য করবে না। রাজা প্রথম চার্লস বাধ্য হয়ে এ দাবি মেনে নেন।
১২. গৌরবময় বিপ্লব: ১৬৫৮ সালে ক্রমওয়েলের মৃত্যু হলে পার্লামেন্ট ও স্টুয়ার্ট রাজাদের মধ্যে সংঘটিত বিরোধের মীমাংসা হয় বিনা রক্তপাতে ঐতিহাসিক ‘গৌরবময় বিপ্লব’ বা ‘Glorious Revolution’ এর মাধ্যমে। স্টুয়ার্ট রাজা দ্বিতীয় জেমস্ দেশ থেকে বিতাড়িত হন। ফলে স্টুয়ার্ট রাজাদের রাজত্বের অবসান ঘটে।
১৩. অধিকারের বিল (১৬৮৯): ব্রিটেনে শাসনতন্ত্রের বিবর্তন ও পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘Bill of Rights’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ইংল্যান্ডে রাজার ক্ষমতার পরিবর্তে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব ও নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৪. শস্য আইন ও সংস্কার আইন: ১৮১৫ সালে শস্যের আমদানি বন্ধ করে দেশীয় ভূস্বামীদের মুনাফা সংরক্ষণের জন্য শস্য আইন প্রণীত হয়। ১৮৩২ সালের সংস্কার আইনের ভিত্তিতে ভোটাধিকার সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয় এবং
১৯২৮ সাল নাগাদ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ২১ বছর বয়স্ক সকল নাগরিক ভোটাধিকার লাভ করে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ সংবিধান ও তার রাজনৈতিক জীবনের পরিচয় তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের সাথে সাথে গঠিত ও বিবর্তিত হয়েছে। একটি নিরবচ্ছিন্ন পরিবর্তনের স্রোতে এগিয়ে চলেছে। তাই একে অনেক সময় নদীর গতির সাথে তুলনা করা হয়। আইভর জেনিংস এর মতে, যদি ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র কতকগুলো দলিল নিয়ে গঠিত না হয়ে সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়। তবে বলা যায়, ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছে, তৈরি করা হয় নি। সুতরাং দীর্ঘ পনেরশ বছরের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ সংবিধান বর্তমান অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে।