অথবা, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে যা জান বিস্তারিত লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মুঘল রাজত্বের অবসানের পর প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ রাজত্ব। ব্রিটিশ রাজত্বের শুরুতেই বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়। ইংরেজদের শোষণমূলক রাজস্বনীতি, চিরাচরিত রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন, দেশীয় বিচারব্যবস্থার পদক্ষেপ, দেশীয় রীতিনীতি বিরোধী কার্যকলাপ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি কারণে বাংলার মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। ব্রিটিশ রাজত্বের দুঃশাসন বাংলায় ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দীর্ঘ দুইশত বছরের শাসন বাংলার রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ব্রিটিশ শাসনের আদি হতে অন্ত পর্যন্ত বাংলা তথা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল এক দ্বন্দ্ব সংঘাতময়। এ দ্বন্দ্ব সংঘাতময় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় বাংলার মানুষের রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। নিম্নে রাজনৈতিক জীবনে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় দালাল সৃষ্টি : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে হিন্দু মুসলিম অনেক বনেদি জমিদার তাদের জমি জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক শ্রেণির নতুন দালাল জমিদার সৃষ্টি হয়।
২. কৃষক আন্দোলনের সূত্রপাত : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে যে দালাল নতুন জমিদার শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রজার অত্যাচার করা এবং ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে সুযোগ সুবিধা অর্জন করা। এ কারণেই সমগ্র ভারতবর্ষে ছোট বড় অনেক কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়।
৩. রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট : ব্রিটিশ বেনিয়াদের দুই শত বছরের শাসনব্যবস্থা বাংলার জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। তাদের শাসনব্যবস্থার প্রারম্ভেই বাংলা ও ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়।
৪. স্বভারতীয় মুসলিম লীগের সূচনা : ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাসনের অত্যাচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বাংলা তথা ভারতীয় জনগণের মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯০৬ সালে ‘সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ’ নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৫. সর্বভারতীয় কংগ্রেসের জন্ম : ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠলেও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এসব আন্দোলন সফলতা লাভ করতে পারেনি। এ কারণে ১৮৮৫ সালে ‘সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় বাংলার জাতীয় জীবনের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের গোড়া পত্তন ঘটে এবং পরে ব্রিটিশ রাজ্যের সরাসরি শাসন প্রায় দুই শত বছর বহাল থাকে। ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ব্রিটিশ শাসনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল।