অথবা, ব্রিটিশ আমলের সামাজিক ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ আমলের সামাজিক পটভূমি সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, ব্রিটিশ আমলের সামাজিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থার ফলে বাংলার সামাজিক জীবন ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন সূচিত হয়। তাই বাংলার জনসাধারণের সামাজিক জীবনে ব্রিটিশ শাসনের পটভূমি এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
ব্রিটিশ আমলের সামাজিক পটভূমি : নিম্নে সামাজিক পটভূমি আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক স্তরবিন্যাসে আমূল পরিবর্তন : ব্রিটিশ শাসন বাংলার সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। বাংলার মানুষের সামাজিক জীবনে এক গতিশীলতার সূচনা হয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ অনেকাংশে দূরীভূত হয়।
২. সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট : ব্রিটিশ শাসনামলে সমগ্র ভারবর্ষের জনগণ তাদের সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি হারাতে থাকে। মুসলমানদের অবস্থা ছিল এক্ষেত্রে মারাত্মক ভয়াবহ। মুসলমানরা তাদের সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি হারিয়ে উন্নত সংস্কৃতি থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে।
৩. হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসন ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য হিন্দু জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় এবং মুসলমানদের পরিবর্তে হিন্দু শোষণ নীতি চালু করে। ফলে বাংলার সমাজব্যবস্থায় হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি হয়।
৪. মুসলিম সংস্কার আন্দোলন : ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার ধর্মীয় জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। এ সময় ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আলীগড় আন্দোলন ও ফরায়েজি আন্দোলন এর প্রকৃত উদাহরণ ।
৫. ‘ইংরেজি ভাষার প্রভাব : ব্রিটিশ শাসনের ফলে এ দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। হিন্দু সম্প্রদায় ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরি ও ব্যবসায় বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করে। পরবর্তীকালে ইংরেজি রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু বাংলার মুসলমানরা পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞান তথা ইংরেজি ভাষা শিক্ষা লাভে বিরত থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটিশ শাসনের আর্থসামাজিক প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বস্তুত ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে এদেশ কেবল ক্ষতিগ্রস্ত বা শোষিত হয়েছে তাই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমূল ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।