‘ব্যবধানাংক বা বিভেদাংক কাকে বলে? ব্যবধানাংকের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।

উত্তর৷ ভূমিকা : বিস্তারের আপেক্ষিক পরিমাপকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং বহুল ব্যবহৃত এককবিহীন পরিমাপক হচ্ছে ব্যবধানাঙ্ক বা বিভেদাংক। ব্যবধানাংক হলো আপেক্ষিক বিস্তার পরিমাপসমূহের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিমাপ । যখন দু বা ততোধিক তথ্যসারির বিস্তারের তুলনা করতে হয় তখন ব্যবধানাংক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । কোন তথ্যসারি বা নিবেশনের পরিমিত ব্যবধানকে উক্ত তথ্যসারি বা নিবেশনের গাণিতিক গড় দ্বারা গুণ করলে নিবেশনটির ব্যবধানাংক নির্ণীত হয়।
ব্যবধানাংক : বিস্তারের আপেক্ষিক পরিমাপকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং বহুল ব্যবহৃত এককবিহীন পরিমাপক হচ্ছে ব্যবধানাংক বা বিভেদাংক। বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ কার্ল পিয়ারসন (Karl Pearson) ব্যবধানাংকের সর্বপ্রথম প্রবক্তা । কোন তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের পরিমিত ব্যবধানকে গাণিতিক গড় দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে ১০০ দ্বারা গুণ করলে যে সংখ্যামান পাওয়া যায় তাকেই ব্যবধানাংক বা বিভেদাংক বলে। Anthony Walsh, “The co-efficient of variation is calculated by multiplying the standard deviation by 100 and dividing the mean.” অর্থাৎ, কোন তথ্যসারি বা নিবেশনের পরিমিত ব্যবধানকে ১০০ দ্বারা গুণ করে গাণিতিক গড় দ্বারা ভাগ করলে ব্যবধানাংক পাওয়া যায়। অনেক পরিসংখ্যানবিদ ব্যবধানাংককে পরিমিত ব্যবধানের সহগ বলে উল্লেখ করেছেন। ব্যবধানাংককে CV দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কোন তথ্যসারির গাণিতিক গড় X এবং পরিমিত ব্যবধান SD হলে ব্যবধানাংক বা বিভেদাংক হবে : SD C. V = X x ১০০ অর্থাৎ ব্যবধানাংক বা বিভেদাংক পরিমিত ব্যবধান গাণিতিক গড় x ১০০ সুতরাং বলা যায় যে, ব্যবধানাংকের কোন একক নেই। এটি একটি বিশুদ্ধ সংখ্যা। এটি গাণিতিক গড় হতে তথ্যে মানসমূহ কি পরিমাণে বিস্তৃত তা পরিমাপ করে। দু বা ততোধিক তথ্যসারির মধ্যে যার ব্যবধানাংক বেশি সে তথ্যসারির মানগুলো অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ। আবার, যার ব্যবধানাংক কম যে তথ্যসারির মানগুলো সামঞ্জস্যতাপূর্ণ। অর্থাৎ কম ব্যবধানাংক সম্পন্ন তথ্যসারি বা নিবেশনটি অধিক গ্রহণযোগ্য ।
ব্যবধানাংকের প্রয়োজনীয়তা : বাস্তবে ব্যবধানাংকের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। বিশেষকরে, বিভিন্ন এককে প্রকাশিত দু বা ততোধিক তথ্যসারির বিস্তৃতি তুলনা করতে ব্যবধানাংকের প্রয়োগ ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবধানাংক পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো :
১. যদি দু বা ততোধিক তথ্যসারির মানগুলো ভিন্ন ভিন্ন এককে দেয়া থাকে তখন এদের বিস্তৃতি তুলনা করতে ব্যবধানাংকের প্রয়োজন হয়।
২. কোন তথ্যসারির বা নিবেশনের অভ্যন্তরীণ ভেদ অর্থাৎ গঠন প্রকৃতি নির্ণয়ে ব্যবধানাংকের প্রয়োজন রয়েছে।
৩. শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা যাচাই করতে ব্যবধানাংক প্রয়োগ করা হয়। যেমন- দুটি কারখানার উৎপাদিত বাল্বের মধ্যে কোন কোম্পানির উৎপাদিত বাল্বের গড় আয়ুষ্কাল বেশি অর্থাৎ সামঞ্জস্যতাপূর্ণ তা নির্ণয়ে ব্যবধানাংক ব্যবহার করা হয়।
৪. দু বা ততোধিক কোম্পানির শেয়ারের দামে গতি-প্রকৃতি অনুধাবনে উত্থান-পতনের গতি নির্ণয়ে ব্যবধানাংকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৫. জাতীয় সম্পদের বণ্টনের সমসত্ত্বতা যাচাইয়ে ব্যবধানাংক ব্যবহৃত হয়।
৬. ব্যবধানাংক সমজাতীয় দু বা ততোধিক তথ্যসারির সামঞ্জস্যতা তুলনা করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
৭. এটি উচ্চতর পরিসংখ্যানেও ব্যবহৃত হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, দুই বা ততোধিক তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের মধ্যে যে তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের ব্যবধানাংক ছোট, সেই তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের তথ্য বা উপাত্তসমূহ অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ (Consistent), অধিক সমসত্ত্ব বা অধিক স্থিতিশীল হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, যে তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের ব্যবধানাঙ্কের মান বড় সেই তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনের তথ্য বা উপাত্তসমূহ কম সামঞ্জস্যপূর্ণ, কম সমসত্ত্ব বা কম স্থিতিশীল বলে গণ্য হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa/