ব্যক্তি সমাজকর্মে সাহায্যার্থীর অংশগ্রহণের গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তির অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কেন আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তির অংশগ্রহণের তাৎপর্য আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তির অংশগ্রহণের প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজকর্মের একটি অন্যতম মৌলিক পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। ব্যক্তির এমন কতকগুলো সমস্যা থাকে যা ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত। আর ব্যক্তির এ ধরনের একান্ত ব্যক্তিগত মনোসামাজিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য ব্যক্তি সমাজকর্মের একটি প্রতিকারধর্মী ব্যবস্থা হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। এখানে একজন পেশাদার সমাজকর্মী যিনি ব্যক্তি সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত, তিনি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সহায়তা করে থাকেন। তাকে সহায়তা করতে গিয়ে ব্যক্তি সমাজকর্মীকে সমাজকর্মের কতকগুলো নিয়মনীতি, বিশ্বাস, ধ্যানধারণা মেনে চলতে হয় যেগুলো সমাজকর্মে নীতি হিসেবে স্বীকৃত।
ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তি বা সাহায্যার্থীর অংশগ্রহণের গুরুত্ব : ব্যক্তি সমাজকর্মে সাহায্যার্থী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং একটি প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি। বস্তুত অংশগ্রহণ হলো একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। নিম্নে ব্যক্তি সমাজকর্মে সাহায্যার্থীর অংশগ্রহণের গুরুত্ব বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হলো :
১. সমস্যা সম্পর্কে অবহিতকরণ : একজন সাহায্যার্থী যখন কোন সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং সে নিজে এককভাবে সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় তখন সে একজন পেশাদার ব্যক্তি সমাজকর্মীর শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে যদি ব্যক্তি নিজে ব্যক্তি সমাজকর্মীর কাছে অংশগ্রহণ করেন তবে তার সমস্যা সম্পর্কে ব্যক্তি সমাজকর্মীকে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা সম্ভব নয়। সাহায্যার্থী নিজের সমস্যা নিজের মত করে তখনই ব্যক্ত করতে সক্ষম হবেন, যখন তিনি ব্যক্তি সমাজকর্মীকে সমস্যা
অবহিতকরণের ক্ষেত্রে নিজেই অংশ নিবেন।
২. ব্যক্তি সমাজকর্মী সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার ক্ষেত্রে : সাহায্যার্থী সমস্যাগ্রস্ত থাকেন এবং তিনি তার সমস্যার সমাধান কামনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি এমন একজন ব্যক্তিকে প্রত্যাশা করেন যিনি তার সমস্যা সমাধানে আসলেই
সহায়তা করতে পারবেন। যদি সাহায্যার্থী একজন ব্যক্তি সমাজকর্মীর কাছে নাই আসলেন তাহলে তার পক্ষে ব্যক্তি সমাজকর্মী সম্পর্কে কিছুই জানা হলো না। তাই ব্যক্তি সমাজকর্মী সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে সাহায্যার্থীকে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
৩. প্রতিষ্ঠান ও সেবা সম্পর্কে জানা : সাহায্যার্থী ব্যক্তি সমস্যার সমাধান চান। কিন্তু তার যে সমস্যা এবং যে প্রতিষ্ঠানের কাছে সহায়তা প্রত্যাশা করেন তা একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই জানতে হবে। সাহায্যার্থীকে প্রতিষ্ঠান থেকে কি কি ধরনের এবং কোন উপায়ে সেবা দান করা হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি এবং
তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে এর কতটা সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা জানার জন্য সাহায্যার্থীকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।
৪. কর্মসূচি নির্ধারণে : ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তি সাহায্যার্থীর উপর কোন ধরনের সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয় না। এ ধরনের জোরাজুরি সমাজকর্ম নীতির পরিপন্থি। ব্যক্তি নিজে তার সমস্যার সমাধানে কি ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তা সমাজকর্মীকে অবহিতকরণের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক। এক্ষেত্রে যদি সাহায্যার্থী অংশগ্রহণ করে তবে কাজটা সমাজকর্মীর জন্যও অনেকটা সহজ হয়।
৫. অগ্রাধিকার নির্ধারণ : সাহায্যার্থীর মধ্যে দেখা যায় একই সময়ে অনেকগুলো বা কতিপয় সমস্যা বিদ্যমান। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্মীর পক্ষে নির্ধারণ করা দুঃসাধ্য যে আসলে কোন সমস্যাটা ব্যক্তির জন্য প্রধান সমস্যা এবং কোনটা আগে সমাধান করা উচিত। সাহায্যার্থী যদি সমাজকর্মীর সাথে অংশগ্রহণ করে তা সহজেই সমস্যার মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যা নির্ধারণ করে সমাধানের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া যায়।
৬. সম্পদ অনুসন্ধানে : প্রত্যেক ব্যক্তিই কোন না কোন গুণে গুণান্বিত। একজন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি হয়ত আপাতভাবে সমস্যায় পড়েছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার অভ্যন্তরীণ সকল প্রতিভা ও নৈপুণ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থী যদি তার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্মীর সাথে অংশগ্রহণ করে তবে সমাজকর্মী ব্যক্তির বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদ কি কি আছে তা সহজেই নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। ব্যক্তির সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া তখন অনেকটা
সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
৭. পরিকল্পনা : পরিকল্পনা হলো একটি বুদ্ধিভিত্তিক প্রক্রিয়া। এখানে লক্ষ্যার্জনের জন্য কার্যক্রমসমূহ নির্ধারণ করা হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর সমস্যার আলোকে তার জন্য একটা সেবা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। সাহায্যার্থী এক্ষেত্রে যদি অংশগ্রহণ করে তবে ব্যক্তি সমাজকর্মীর জন্য একটা সেবা পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজতর হয়। কারণ সাহায্যার্থী এখানে তার মতামত সহজেই ব্যক্ত করতে পারেন, যা সমাজকর্মীর জন্য দিকনির্দেশক হতে পারে।
উপসংহার : ব্যক্তি সমাজকর্মের নীতিসমূহ ব্যক্তি সমাজকর্মকে অন্যান্য পেশা থেকে অনেকটা আলাদা করে পরিচিত করতে হয়েছে। ব্যক্তি সমাজকর্মের আলোচ্য নীতিসমূহ যদি যথার্থভাবে মনে রেখে সমাজকর্মী তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন তবে সাফল্য অনিবার্য। এক্ষেত্রে আরও বলা যায়, বর্তমান সময়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়, যা ব্যক্তি সমাজকর্মের একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হিসেবে বহু আগেই স্বীকৃত। একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সেবা কার্যক্রম হিসেবে ব্যক্তি সমাজকর্মে তাই সাহায্যার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাকে সহায়তার প্রচেষ্টা চালায়।